যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে মসজিদের নিরাপত্তার জন্যে চালু করা হলো বেসরকারি একটি টহল দল। নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের দুটো মসজিদে খ্রিষ্টান সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৫১ জন শহীদ হওয়ার কয়েকদিন পর এই উদ্যোগ নেয়া হয়। খবর বিবিসি’র।
শুক্রবার দুপুরে ব্রুকলিন মসজিদে মুয়াজ্জিন যখন আজান দেবেন, তার কয়েক মিনিট আগে তরুণ মুসলিমদের একটি দল একটি গাড়ি নিয়ে ছুটে গেল পাশেরই একটি মসজিদে। এই গাড়িটি দেখতে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল দেওয়া গাড়ির মতো। গাড়িটিতে লাল ও শাদা রঙের জরুরি দুটো লাইট জ্বলছে। সেটিকে রাখা হলো মসজিদের বাইরে। মুসল্লিরা যতক্ষণ নামাজ পড়বেন গাড়িটিও সেখানে ঠিক ততক্ষণ সেখানে অবস্থান করবে।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় বাড়তি নিরাপত্তার জন্য নিউ ইয়র্কে এই গ্রুপটি গড়ে তোলা হয়েছে। গ্রুপটির নাম ‘মুসলিম কমিউনিটি পেট্রোল’। মসজিদ ও মাদ্রাসায় যখন বেশি ভিড় থাকবে তখনই এই গ্রুপটি সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে।
শহরের তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা এই গ্রুপটি গড়ে তুলেছেন। একজন স্বেচ্ছাসেবী এবং এই গ্রুপের একজন প্রতিষ্ঠাতা নূর রাবা বলছেন, তারা মনে করছেন যে এই গাড়ির বাতি জ্বালিয়ে এবং সাইরেন বাজিয়ে তারা নিজেদের হামলার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমরা নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কেউ নেই। আমরা হচ্ছি কোন কিছু হলে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর চোখ ও কান। রাবা বলেন, নিউ ইয়র্কের মুসল্লিদের নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকদিনেরই ইস্যু। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চের হামলার পর নিরাপত্তা আরো জরুরি হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের বৃহত্তর সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স রমজান মাসে মুসলিমদের সজাগ থাকতে ও নিরাপত্তা বাড়াতে আহবান জানিয়েছে।
এর মধ্যেই দেশটির বহু মসজিদে নিরাপত্তা-জনিত বাড়তি প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মধ্যে গুলি চালানোর প্রশিক্ষণও রয়েছে। মুসলিম কমিউনিটি পেট্রোলও ব্রুকলিন মসজিদে ও তার আশেপাশে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। মুসলিম পেট্রোল গ্রুপ আগামী বছরের মধ্যে তাদের কার্যক্রম পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
স্থানীয় এলাকার অনেকেই তাদের ওখানে এই গ্রুপের উপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। টুইন টাওয়ারে ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর নিউ ইয়র্কের পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকেও মুসলিম কমিউনিটির সাথে নানা রকমের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
মুসলমানদের মধ্যে এখনও এবিষয়ে গভীর ভয় এবং সন্দেহ রয়ে গেছে। তাদের অনেকেই মসজিদে পুলিশের অব্যাহত উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মিশিগান ভিত্তিক একজন আইনজীবী নামিরা ইসলাম নিরাপত্তার ব্যাপারে শুধুমাত্র পুলিশ কিম্বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর নির্ভর না করে অন্যান্য উপায় খুঁজে বের করার জন্যেও মুসলিম কমিউনিটির প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
নামিরা ইসলাম বলেন, মসজিদের দরজার বাইরে সশস্ত্র পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে- এই দৃশ্যটা দেখে আমি নিরাপদ বোধ করি না,” বলেন মিস ইসলাম। তিনি আরও বলেন, মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে এসব বাহিনীর ভূমিকার ইতিহাসের কথা তারা জানেন। শুধু আইনগতভাবে বৈধ হলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যায় না।