Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

mushiতিন শ বাড়িয়ে টার্গেটটা সোয়া তিন শ করেছিল বাংলাদেশ। গতকাল কার্ডিফের প্রস্তুতি ম্যাচে তাই ভারতের সাড়ে তিন শ ছাড়িয়ে যাওয়া ইনিংসের পর কী ঘটতে যাচ্ছে, তা অনুমিতই ছিল। হারের ব্যবধানটা শুধু কমিয়েছেন লিটন কুমার দাশ ও মুশফিকুর রহিম। সেই কম ব্যবধানও খুব আশাপ্রদ নয়, ৯৫ রানের।

প্রস্তুতি ম্যাচের ফল নিয়ে কোনো দলই বেশি ভাবছে না। তবে অনভ্যস্ত ইংলিশ কন্ডিশনের প্রতিকূলতার মুখে প্রতিক্রিয়া দেখে নেওয়াকে মুখ্য ধরে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে দলগুলো। পাকিস্তান ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পণ্ড হওয়ায় এই একটাই সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার, প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। মৃদু চোটের কারণে সে সুযোগটা পাননি তামিম ইকবাল। আর টিম ম্যানেজমেন্ট অপচয় করেছে একটা সুযোগ। শেষ দিকে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের তোপ থেকে আত্মরক্ষার অনুশীলনটা আর করেনি বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের ম্যাচে ওই সময়টায় যাঁদের দিয়ে বোলিং করানোর পরিকল্পনা রয়েছে, তাঁদের গতকাল আগলে রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। হয়তো প্রস্তুতি ম্যাচে ডেথ বোলারদের আত্মবিশ্বাসে চোট লাগার ঝুঁকি নিতে চাননি দলের নীতিনির্ধারকরা।

chardike-ad

তবে প্রতিপক্ষ সাড়ে তিন শ টপকে গেলে করণীয় সম্পর্কে মৃদু ধারণা তো অন্তত হয়েছে! ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচে তিন শ ঊর্ধ্ব ইনিংসের ভাবনা নিয়েই নাকি নামবে বাংলাদেশ। তবে অন্য দলগুলো যেমন শুরু থেকে তোপ দাগবে, সে পথে সম্ভবত হাঁটবে না বাংলাদেশ। প্রথম ১০ ওভারে একটু রয়েসয়ে খেলে উইকেট কম হারানোই প্রাথমিক লক্ষ্য। এরপর রানের গতি কিছুটা বাড়িয়ে শেষ ২০ ওভারকে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বানিয়ে যদি অনভ্যস্ত তিন শ পথ পাড়ি দেওয়া যায়।

তামিমের অনুপস্থিতিতেও ১০ ওভারের দলীয় দাবি পূরণ করেছেন সৌম্য সরকার ও লিটন। কিন্তু জনপ্রিত বুমরাহর হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জেগে ওঠার সঙ্গে নিভে যায় বাংলাদেশের অভাবিত কীর্তি গড়ার আশার আলোও। ভারতীয় পেসারের নেওয়া অফস্টাম্প লাইনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছেন সৌম্য। পরের বলটাই ভয়ংকর ইয়র্কার, প্রথমেই এমন বলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে ভাগ্যাহত মনে করতেই পারেন সাকিব আল হাসান।

বিনা উইকেটে ৪৯ রান। সেখানেই আটকে থেকেই নেই ২ উইকেট। মুশফিকুর রহিম অবশ্য বুমরাহর হ্যাটট্রিক ঠেকিয়েছেন। লিটনের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে গড়েছেন ১২০ রানের জুটি। এ জুটি আশার টিমটিমে সলতে জ্বালিয়ে রেখেছিল। কিন্তু আবারও জোড়া আঘাত বাংলাদেশের ইনিংসে। এবার বোলারটি যুযবেন্দ্র চাহাল। প্রথমে লিটনকে উইকেট থেকে বাইরে এনে স্টাম্পড করেছেন এ লেগস্পিনার। পরের বলে গুগলি, যা পড়তে না পেরে এলবিডাব্লিউ মোহাম্মদ মিঠুন। হ্যাটট্রিক হয়নি চাহালেরও, তবে বাংলাদেশের নাগালের মধ্যে ভাসতে থাকা সম্ভাবনার খড়কুটোও সরিয়ে নিয়েছেন নিশ্চিতভাবে। ম্যাচের বাকি অংশে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ মুশফিক আর মাহমুদ উল্লাহর সামনে পড়ে ছিল শুধুই ব্যাটিং অনুশীলনের সুযোগ। মাহমুদের হয়নি। তবে নিজের প্রস্তুতি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন মুশফিক। সব তো আর ঠিকঠাক হয় না, ১০ রানের জন্য তাঁরও রয়ে গেছে সেঞ্চুরির আক্ষেপ।

অবশ্য সকালটা পিকচার পারফেক্টই মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য। মেঘলা আকাশের নিচে কনকনে হাওয়ায় টস জেতায় বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এমন কন্ডিশনে বিরাট কোহলিরও একই পরিকল্পনা ছিল। কেন ছিল, সেটি বোঝা গেছে ম্যাচের প্রথম ঘণ্টাতেই। মুস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন—কারোর সামনেই স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি শিখর ধাওয়ান, কোহলি কিংবা রোহিত শর্মাকে। তবু ভারতের ইনিংস রকেটে চড়ে বাংলাদেশের দৃষ্টি সীমার বাইরে গেছে দুজনের কারণে। লোকেশ রাহুল ও মহেন্দ্র সিং ধোনির সেঞ্চুরির কল্যাণে। সেদিনই বাংলাদেশি ক্রিকেটার মহলে প্রশ্ন উঠেছিল, চার নম্বরে আম্বাতি রায়ডুই হতো ভারতের সেরা নির্বাচন। কিন্তু তাঁকে তো দলেই রাখেননি কোহলি। তবে যে দুজন আছেন চার নম্বরের লড়াইয়ে সেই রাহুল ও বিজয় শঙ্করের মধ্যে প্রথমজনের বাক্সেই বেশি জনমত বাংলাদেশ দলে। সেটি কাল কী দারুণভাবেই না প্রমাণ করে দিলেন লোকেশ রাহুল। কোহলিসহ অন্যরা যখন ব্যাটের কানায় অনিশ্চিত ক্রিকেট খেলছিলেন, তখন এ ডানহাতির ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডের দ্রুতগামী ট্রেনে চড়ার স্বাচ্ছন্দ্য। নিশ্চিতভাবেই রাহুলের চড়াও হয়ে করা ব্যাটিং চাপ সরিয়ে দিয়েছিল ধোনির ওপর থেকে। একটু সময় নিয়েছেন যথারীতি। ইনিংসের শেষাংশেও দেখা গেল চেনা ধোনিকে, সেই বিধ্বংসী মেজাজে। সেঞ্চুরি করেন বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে। ধোনির আগে সেঞ্চুরি করেন রাহুলই। পঞ্চম উইকেটে দুজনের দ্রুতগতির ১৬৪ রানের জুটিই আসলে ম্যাচের গতিপথ তৈরি করে দেয়।

এরপর সে পথ ধরেই জয়ের গন্তব্যে পৌঁছেছে ভারত। যাত্রাপথে বুমরাহ ও চাহালের পর কুলদীপ যাদবের সামনেও যে হ্যাটট্রিকের সুযোগ এসেছিল। কোনোটিই হয়নি, তবে চার নম্বরে লোকেশ রাহুল নাকি বিজয় শঙ্কর—সে প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত পেয়ে গেছে ভারত। আর বাংলাদেশের প্রাপ্তির ভাণ্ডারে পাওয়া যাচ্ছে মুস্তাফিজের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত এবং বিশ্বকাপ বাস্তবতার স্বাদ। অবশ্য একটি টোটকাও আছে, প্রস্তুতি ম্যাচে হারলেই যে মূল আসরে জ্বলে ওঠে বাংলাদেশ!