বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন মাহমুদুল ইসলাম মামুন। সবুজ প্রকৃতি গড়ার স্বপ্ন দেখা এ তরুণ কষ্টার্জিত টাকায় গাছ কিনে বিতরণ করে আসছেন দীর্ঘ ৭ বছর ধরে। এছাড়া পাড়ায়-মহল্লায় বিভিন্ন বয়সী মানুষ জড়ো করে বই পড়ে শোনান। এ জন্য গড়ে তুলেছেন সান্ধ্য পাঠশালা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস কে দোয়েল-
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামের সন্তান মামুন। বাবা আজহারুল ইসলাম পঞ্চগড় চিনিকলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। মা মাহমুদা বেগম গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে মামুন ছোট। তিনি রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্র জীবন শেষে চাকরি না করে হয়েছেন বই ও গাছের ফেরিওয়ালা। তিনি মনে করেন, উচ্চশিক্ষা নিলেই যে চাকরি করতে হবে, তা নয়। শিক্ষিত মানেই আলোর প্রদীপ। সে আলোর প্রদীপ ছড়াতেই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
হতদরিদ্র, মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের স্কুলপড়ুয়ারা মামুনের কাছে পড়ালেখা শেখে বিনামূল্যে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেখানোর পাশাপাশি সবুজ প্রকৃতি গড়ার পদ্ধতিও শেখান। গাছ উপহার দেন সবাইকে। এ স্বপ্ন নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের মাঝে গাছ বিতরণ করে আসছেন মামুন।
নিজ গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী ১০ গ্রামে কয়েক হাজার গাছ লাগান মামুন। এছাড়া ঢাকা, রংপুর, ঠাকুরগাঁও যখন যে শহরে যান, সে শহরেই গাছ লাগান। বই নিয়ে কথা বলেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির কাছে গিয়েও সাহিত্যপাঠ আবশ্যক করার অনুরোধ করেন তিনি।
শুধু গাছপাগলই নন, শিশু কিশোর ও তরুণদের বইও উপহার দেন তিনি। নিজেও লিখেছেন উপন্যাস। ২০১৪ সালে একুশে বইমেলায় জননী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় ‘লাল ফিতায় অমিয়’ নামে একটি উপন্যাস। শিশু-কিশোরদের গল্প, উপন্যাস, রম্য, সায়েন্স ফিকশনসহ নানা রকম বই উপহার দেন।
নিজের টাকায় গাছের চারা ও বই বিতরণ করতে মামুন টাকা পান কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, ‘এসব কাজের জন্য আমি বাড়িতে হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলেছি। ডিম ও বাচ্চা বিক্রির টাকা দিয়ে গাছের চারা ও বই কিনি। পারিবারিক চা-বাগানেও কাজ করি। আমার এ কাজে উৎসাহ দিতে বাবা-মা সহযোগিতা করেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও গাছ উপহার দিতে চান মামুন। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠিও পাঠিয়েছেন। ফুল, ফলদ ও বনজ গাছের চারা উপহার দিয়েছেন এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের। দেশবরেণ্য সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে গাছের চারা ও বই উপহার দিয়েছেন। বন্ধু-বান্ধবদের দাওয়াতসহ সামাজিক অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতেও বই ও গাছের চারা উপহার দিচ্ছেন।
মামুনের এ কাজ সম্পর্কে মা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘নিজের কাজের পাশাপাশি মানুষের উপকার করছে সে। পরোপকারী এমন ছেলেকে নিয়ে সত্যিই আমি গর্বিত। টাকা ছাড়া নাকি স্বপ্ন দেখা যায় না। কিন্তু আমার ছেলেটা তেমন টাকা ছাড়াই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কাজ করছে।’
সৌজন্যে- জাগো নিউজ