Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

biman-shafiqulটাকার বিনিময়ে ফ্রি টিকিট বিক্রি, টিকিটে অনিয়ম ও কার্গো জালিয়াতির মাধ্যমে চার বছরে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা! এমন অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডন স্টেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বুধবার তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করেছে বিমান।

বিমানের লন্ডন স্টেশন সূত্র জানায়, গত চার বছরে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এই টাকা দিয়ে লন্ডনে কিনেছেন বাড়ি-গাড়ি। শুরু করেছেন ব্যবসা।

chardike-ad

সূত্র জানায়, শুধু ফ্রি টিকিট বাবদ এ কর্মকর্তা হাতিয়ে নিয়েছেন ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শফিকুল ইসলামের নামে চার বছরে লোকাল স্টেশন থেকে দুই হাজার ৪৭২টি ফ্রি টিকিট ইস্যু হয়। যার সবই ছিল লন্ডন-ঢাকা-লন্ডন রুটে। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ছিলেন এক হাজার ১৩৬ জন। ইকোনমি ক্লাসের এক হাজার ৩৩৬ জন।

শফিকুল ইসলামের টিকিট-সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে কাছে বেশকিছু তথ্য এসেছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শফিকুল ইসলাম ২০১৬-১৭ সালে বিমানের লন্ডন অফিস থেকে মোট ৬৮৩টি ফ্রি টিকিট ইস্যু করেন। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাসের ২৭৪ এবং ইকোনমি ক্লাসের ৮০৯টি। ২০১৭-১৮ সালে বিজনেস ক্লাসের ১৫১টি এবং ইকোনমি ক্লাসের ২০৯টি, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৯৩টি বিজনেস ক্লাস এবং ৩৭৫টি ইকোনমি ক্লাসের টিকিট বিক্রি করেন।

২০১৯ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য আগেই ৫১৫টি ফ্রি টিকিট ইস্যু করে রেখেছিলেন শফিকুল ইসলাম। যার ২৮৫টি বিজনেস ক্লাসের।

লন্ডন থেকে বিমানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘শফিকুল ইসলাম লন্ডন থেকে বিদায়ের আগের দুই মাসে রেভিনিউ টিকিট বিক্রিতে অমনোযোগী ছিলেন। তা না হলে দুই মাসে ৫১৫ ফ্রি টিকিটের যাত্রী কোথায় পেলেন? এটি একটি ডাকাতি।’

তিনি বলেন, ‘বিমানের ফ্রি টিকিট প্রদানে ন্যূনতম কোনো নিয়ম-কানুন মানেননি শফিকুল। বিমানের সার্কুলার নির্দেশিত নিয়মানুযায়ী, প্রতি বছরে মনোনীত এজেন্সি ও এজেন্সির সম্ভাব্য ফ্রি টিকিটের ব্যবহারকারীর নাম আগে থেকে বিমানের প্রধান কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা। এজন্য বিমানের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে এ সার্কুলারের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে শফিকুল ইসলাম ফ্রি টিকিট বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।’

শফিকুল ইসলামের বিষয়ে ২০১৭ সালে বিমানের ইন্টারনাল অডিট বিভাগ আপত্তি দিলে তা আমলে নেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ। বিমানের স্টেশন ম্যানেজার ছাড়াও শফিকুলের আলাদা একটি রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঢাকা কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক ছিল। এটি কাজে লাগিয়ে ‘ফ্রি স্টাইলে’ নানা অনিয়ম চালিয়ে গেছেন শফিকুল।

তার ওই অনিয়মের বিষয়টি সবার নজরে এলে গতকাল মঙ্গলবার বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ (বুধবার) তাকে ওএসডি করা হয়। পাশাপাশি ফ্রি টিকিট বিক্রি করে ১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, ফ্রি টিকিটে বিজনেস ক্লাসের যাত্রী এক হাজার ১৩৬ এবং ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী এক হাজার ৩৩৬- এ অংক সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে না। সার্কুলার অনুযায়ী যারা বিজনেস ক্লাসের যোগ্য তাদের নামে টিকিটগুলো ইস্যু করেছেন- সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে এর প্রমাণ দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দিনের মধ্যে একটি কমিটি লন্ডনে পাঠানো হবে। লন্ডন স্টেশনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি খাতে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, সেগুলোও তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’

সৌজন্যে- জাগো নিউজ