রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের কাছে একটি পরিচিত নাম ‘সিস্টেম। ডাল-ভাত, ডিম, আলুভর্তা, ডালভর্তা, সিমভর্তা, আলুভাজা, বেগুনভাজা ও বাঁধাকপিভাজা একত্রে সাজিয়ে নাম দেয়া হয়েছে ‘সিস্টেম’। এই আট পদের খাবারের দাম মাত্র ২০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজার সংলগ্ন হোটেল মাদারীপুরে পাওয়া যায় এ খাবার।
প্রতিদিন এই খাবারের জন্য ভীড় জমে হোটেলটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মুখে মুখে শোনা যায় সিস্টেমের গুণগান। কেউ শখের বশে খায় সিস্টেম, আবার কেউ খায় পকেটের দিকে তাকিয়ে। বেলা ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতিদিন পাওয়া যায় এই খাবার।
প্রায় ২০ বছর থেকে অন্য খাবারের সাথে সিস্টেম বিক্রি করছেন বলে জানান হোটেলের মালিক মানিক মিয়া। তিনি ক্যাম্পাসের সবার কাছে ‘চাচা’ নামে পরিচিত। শুরুতে সিস্টেমের দাম ছিলো ছয় টাকা। এখন সবকিছুর দাম বাড়াতে ২০টাকায় এসে দাম ঠেকেছে বলে জানান তিনি। তবে দাম কম হলেও খাবারের মান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হোটেলগুলোর তুলনায় যথেষ্ট ভালো বলে জানান হোটেলে খেতে আসা শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শরীফ সামি বলেন, সিস্টেমে ২০ টাকায় যে খাবার দেয়া হয়, তা বাইরে খেলে ৫০ টাকার কমে হবে না। দাম এত কম হলেও খাবারের মান অন্য হোটেলগুলোর চেয়েও ভালো। তাই সময় পেলেই আসি সিস্টেম খেতে।
হোটেলের এক পাশে দেখা গেলো কয়েকজন শিক্ষার্থীর হৈ-হুল্লোড়। সবার সামনে সিস্টেমের প্লেট। গায়ে-মুখে লেগে আছে কেক ও ক্রিম। কথা বলে জানা যায় তারা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের একজনের জন্মদিন আজ। জন্মদিনের কেক কাটা শেষে খাবার পর্ব সারতে এসেছেন সিস্টেমের কাছে। তাদের একজন বলেন, সবার কাছেই সিস্টেমের গুণগান শুনি। তাই বন্ধু-বান্ধবীরা আজ একসাথেই আসলাম ‘চাচার’ সিস্টেমের স্বাদ নিতে।
রাবির মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাহাজুল ইসলাম বলেন, মাঝেমধ্যেই সিস্টেম খেতে আসি। যখন পকেটে টান পড়ে তখন সিস্টেমের ওপরই অনেকটা ভরসা করতে হয়। কারণ, ক্যাম্পাসের অন্য দেকানের খাবারের মান খারাপ; কিন্তু দাম বেশি।
হোটেল মালিক মানিক মিয়া বলেন, ২০ বছর আগে ব্যবসা শুরু করেছিলাম ছোট্ট এক ভাতের দোকান দিয়ে। তখন আমার মাথায় এক বুদ্ধি এলো, ভাবলাম অল্প টাকার মধ্যে ছাত্রদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা। তখন থেকেই চালু করি ৬ টাকার সিস্টেম। তারপর ১০ টাকা ও ১৫ টাকা ছিলো। এখন সবকিছুর দাম অনেক বেশি, তাই ২০ টাকা করতে হয়েছে।
সিস্টেমের প্রতি মানুষের আগ্রহ নিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদের পক্ষে সবসময় বেশি দামের খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না। সেই চিন্তা করেই এই সিস্টেম চালু করেছিলাম, তাই হয়তো এর প্রতি মানুষের আগ্রহ কখনও কমে নাই।
মানিক মিয়ার প্রচেষ্টায় অল্প দামে মানসম্মত খাবার পাচ্ছেন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। সবাই তাকে আদর করে দিয়েছেন ‘চাচা’ উপাধি। এটাই তার ভালো লাগা। মানিক মিয়া হাসতে হাসতে বলেন, ভার্সিটির অনেক ছেইলে-পুলে শিক্ষক হয়া গেছে, অনেকে ম্যালা টেকা বেতনের চাকরি করে। কিন্তু যহন দেখা হইলেই কয়, চাচা খবর কী? তহন মনডা খুশিতে ভইরে যায়।
লেখক- মর্তুজা নুর, সৌজন্যে- বিডি প্রতিদিন