যে কোনো দেশের আইনই পারে সে দেশের জনগণকে স্থিতিশীল সমাজ উপহার দিতে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সু-শাসনই নিয়মতান্ত্রিক জীবন চালাতে বাধ্য করে প্রতিটি দেশের নাগরিকদের। ইতালিতে থাকতে হলে ইতালি সরকারের নিয়মনীতি মেনেই চলতে হবে। নয়তোবা হারাতে হতে পারে দেশটির স্টে পারমিট।
বাংলাদেশে জন্ম তবুও দেশের নিয়ম-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা নেই অনেকের কিন্তু পরদেশের আইনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। তারই বাস্তব চিত্র ইতালিতে অহরহ দেখা যায় বাংলাদেশিদের বেলায়। এ রকম কথায় আশ্চর্য হলেও এটাই ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাস্তব কাহিনি। যার মূল কারণ একটি স্টে-পারমিট।
এই স্টে-পারমিট রক্ষায় এবং তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ইতালির নীতিমালা মানতে বাধ্য এক একজন বাংলাদেশি। নিয়ম মেনে না চললে হারাতে হতে পারে থাকার স্টে-পারমিট। ফলে আইন মানতে বাধ্য সবাই এবং মানেও। দুঃখের বিষয় হলো আমার দেশের আইনতো এমনভাবে মানে না কেউ। যে যার যার মতো চলে। আইনের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই কারো। ফলে বিশৃঙ্খলার সর্বোচ্চ চূড়ায় আমার সোনার বাংলাদেশ।
একটি স্টে-পারমিট মানুষের জীবনকে এমনিভাবে বদলাতে পারে তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। কর্মস্থল থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গায় নিয়মকে প্রাধান্য দিয়ে চলতে হয় সবাইকে। হোক সে ইতালিয়ান নাগরিক বা বাংলাদেশিসহ যে কোনো দেশের নাগরিক।
প্রতিটি অফিসিয়াল কাজ করতে গেলে তাড়াহুড়া বা কাউকে অতিক্রম করার কোনো নিয়ম নেই। সারিবদ্ধ, সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে হয়। কর্মস্থলে আত্মীয়, বন্ধু, এমনকি খোদ রক্তের বন্ধনের তেমন কোনো মূল্য নেই।
অফিসিয়াল নিয়মই প্রতিটি নাগরিককে মেনে চলতে হয়। তা না হলে জবাবদিহিতার যেন শেষ নেই। এ রকম নিয়ম মেনেই বাংলাদেশিরা ইতালিতে জীবন পরিচালনা করছেন। পোস্ট অফিস থেকে শুরু করে থানা, আদালত, পৌরসভা, ব্যাংক প্রত্যেকটি অফিসে নম্রতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থেকে প্রয়োজনীয় কাজ আদায় করে নিতে হয়। নিয়মই মানুষকে ধৈর্য ধারণ করতে শেখায়।
ফলে এ সমস্ত দেশে বিশৃঙ্খলা তেমন একটা চোখে পড়ে না। আরেকটি বিষয় বড়ই লক্ষণীয় ধনী-গরিবের ব্যবধান সহজে বোঝার মতো নয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মালিক-শ্রমিকের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক অবাক করার মতো।
স্টে-পারমিটকে রক্ষার জন্য ভদ্র মানুষ হতে যা প্রয়োজন তাই করছে বাংলাদেশিরা। ঝগড়াঝাটি, মারামারি দেশের মতো তেমন দেখা যায় না বললেই চলে। কারণ আইনে আছে ঝগড়া করলে স্টে-পারমিট আটকে দেবে ইমিগ্রেশন অফিস। আর যেভাবে আটকে যায় স্টে-পারমিট নিয়ম অনুসারে এক একজন অভিবাসীকে প্রথম অবস্থায় দুই বছরের বৈধতা প্রদান করে ইতালি সরকার।
এরপর নবায়ন করতে পুনরায় যে কোনো অভিবাসীকে কাগজপত্র ইমিগ্রেশন অফিসে পাঠাতে হয়। সব কিছু ঠিক থাকলে কার্যদিবসের চল্লিশ দিনের মধ্যে জোনভিত্তিক থানা থেকে সংগ্রহ করতে হয় নবায়নকৃত স্টে-পারমিট।
নবায়নের পূর্বে যদি কোনো বাংলাদেশি কোনো প্রকার ঝগড়াঝাটি করেছে এমন অভিযোগ প্রশাসনের কাছে থাকলে তার স্টে-পারমিট আটকে দেয় ইমিগ্রেশন অফিস। ফলে বৈধ থাকার পর সে অবৈধ হয়ে যায়। কবে, কখন স্টে-পারমিট পুনরায় তাকে দেয়া হবে এমন উত্তর জানা নেই কারোই। এমনকি অ্যাডভোকেটকে ব্যবহার করলেও সঠিক তথ্য পাওয়া বড়ই মুশকিল।
এসব কারণে ঝগড়া বিবাদ বাংলাদেশিদের বর্জন করে চলতে হচ্ছে। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও দেশের মাটিতে এমন ভদ্রলোক হতে পারছে না বাংলাদেশিরা। যেমনটা ভদ্রলোক হতে হয় পরবাসে। একেই বলে আইন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং এর সঠিক প্রয়োগ হলে বাংলাদেশে অপরাধ বহুমাত্রায় কমে যেত।
ইউরোপে অবস্থানরত প্রতিটি বাংলাদেশি স্ব-স্ব দেশের আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ফলে জীবন ব্যবস্থায় কোনো প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। বসবাসও অনেকটা নিজ দেশের মতো এবং রয়েছে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা। ভিন দেশের আইন যেভাবে মেনে চলে অনুরূপ ভাবে যদি দেশের আইনের প্রতি সবার এমন শ্রদ্ধা থাকত তবে বাংলাদেশও একদিন ইউরোপের মতো হয়ে যেত।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ