দশম শ্রেণির ছাত্রী। বয়স ১৪। পুঁচকে এই মেয়েরই নাকি চার বছরের এফেয়ার! সে এই এফেয়ার আর রাখতে চায় না। ব্রেক আপ চায় তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে। কিন্তু বয়ফ্রেন্ড তাকে ছাড়বে না। তাই বয়ফ্রেন্ডকে শিক্ষা দিতে সহযোগিতা চায় বান্ধবীদের কাছে। বান্ধবীরাও তারই পথের সারথী। বান্ধবীকে উদ্ধার করতে তারা সাহায্য চায় তাদের বয়ফ্রেন্ডের কাছে!
এভাবে বান্ধবী, বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ড, ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড করতে করতে জড়ো হয়ে যায় ১৫ থেকে ২০ জন! গার্লফ্রেন্ডের সামনে হিরোইজম দেখানোর এমন সুযোগ কি আর হাতছাড়া করা যায়! তাই অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে কেউ সেই ছেলের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। কেউ ধাক্কা দিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। বাকিরা মারধর শুরু করে। মারধর বলতে গণপিটুনি।
এসময় সেই পিটুনীতে যোগ দেয় আশেপাশের আরও অনেকেই। এ সময় গোলযোগ দেখে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছেলেটিকে উদ্ধার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয় দশ জনকে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এরা সবাই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সবাই খাস্তগীর, কলেজিয়েট, মুসলিম হাইস্কুলের মতো স্কুলের শিক্ষার্থী। প্রায় সবাইই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত।
এত বড় একটা ঘটনা ঘটাতে আসলেও তারা সবাই সবাইকে চেনে না। সবারই পরিচয় ফেসবুকে! ভাবলাম, কোন পথে আমাদের সন্তানেরা? বিশ্বাস করুন আর নাই করুন পুলিশ যথাসময়ে উপস্থিত না হলে কাল পত্রিকার পাতায় আরেকটি ‘আদনান’ কাহিনী পড়তে হতো আপনাদের।
প্রিয় অভিভাবকবৃন্দ, আপনার সন্তানদের প্রতি যত্নবান হোন। তাদের সময় দিন। তাদের বন্ধু হোন। তাদের স্কুলে পাঠিয়ে, কোচিংয়ে পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ মনে করবেন না। তারা স্কুলে যাচ্ছে কিনা, কোচিংয়ে কার সাথে যাচ্ছে, কী করছে সবগুলোই নজরদারিতে রাখুন। তাদের প্রযুক্তির ব্যবহার নজরদারিতে রাখুন।
লেখা: মোহাম্মদ মহসিন, অফিসার ইনচার্জ, কোতোয়ালি থানা, চট্টগ্রাম