Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

malaysiaবাংলাদেশ সরকারের দক্ষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্দোনেশিয়ায় চালু হয়েছে অন অ্যারাইভাল ভিসা। ভ্রমণপিপাসু বাংলাদেশিদের নির্বিঘ্নে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করার সুযোগ তৈরি হয় দেশটিতে। সেই অন অ্যারাইভাল ভিসাকে পুঁজি করে গড়ে উঠছে মানবপাচারকারীদের নিরাপদ রুট।

ইন্দোনেশিয়ার বালি ও মেদান দীপ ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে নৌকা এবং ঢাকা থেকে সরাসরি বিমানে জাকার্তায় নেমে চলে যাচ্ছে সোরাবাইয়া, বালি, বাতাম এবং মেদানে।

chardike-ad

ইন্দোনেশিয়ার মানবপাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়ার পর তাদের জড়ো করা হয় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায়। সুযোগ বুঝে পাচারের অপেক্ষায় থাকতে হয় দীর্ঘদিন। অনেকেই খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করে।

সম্প্রতি মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপকভাবে মেরিন ফোর্স বৃদ্ধি করা হয়েছে। যে কারণে দীর্ঘদিন আটকে থেকেও ইন্দোনেশিয়ার মেদান শহর থেকে গ্রেফতার হতে হলো মালয়েশিয়ায় পাচারের অপেক্ষায় থাকা দুই শতাধিক বাংলাদেশিকে।

এর আগেও পাচারের অপেক্ষায় থাকা বহু বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয় বালি থেকে। অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টাকালে ৩০ বাংলাদেশিকে আটক করে দেশটির ইমিগ্রেশন ও মেরিন পুলিশ।

যাদের বয়স আনুমানিক ১৮ থেকে ৫১ বছর। মেরিন পুলিশের কমান্ডার (পিপিএম) সহকারী কমিশনার রোজমান ইসমাইল বলেন, ‘সাগরপথে ইন্দোনেশিয়া থেকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সময় একটি ট্রলারসহ ৩২ জনকে আটক করা হয়। আটকদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের মামলা হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া অনুপ্রবেশকালে ১০ জন বাংলাদেশিসহ ২১ জন মিয়ানমার নাগরিককে আটক করে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ।

ইন্দোনেশিয়া পুলিশ মেদান শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী এসব বাংলাদেশিকে সন্দেহভাজন বাসিন্দা হিসেবে আটক করে। ওই দোতলা ভবনে অভিযান চালিয়ে ১৯২ ব্যক্তিকে খুঁজে পায় তারা। আটকদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স বিশের কোটায়।

জানা গেছে, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার মেদান শহরের দোতলা একটি ভবনে অবস্থিত ছোট ছোট দোকান ঘরে গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয়া ওইসব মানুষের বেশিরভাগই অভুক্ত। তাদের ধারণা, বাংলাদেশ থেকে এসে কয়েক মাস ধরে এখানে বসবাস করছে তারা। কাজের আশায় পার্শ্ববর্তী দেশ মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা।

মেদান শহরের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থার প্রধান মোনাং শিহিতি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি তারা নৌকায় এখানে এসেছে। তাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দুদিন যেতে না যেতেই ৮ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৫৯ বাংলাদেশিকে। এতেই নড়েচড়ে বসেছে ইন্দোনেশিয়ার অভিবাসন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বাংলাদেশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন অ্যারাইভাল ভিসা চালুকে পুঁজি করে মানবপাচারকারীরা এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিককালের ঘটনার জেরে এখন শুধু ইন্দোনেশিয়াই নয়, নড়েচড়ে বসেছে মালয়েশিয়া সরকারও। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের নৌকায় ভেসে অভিবাসীরা মালয়েশিয়ায় ঢুকতে না পারে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়া হয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের কারণে ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় আরও নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছ ইন্দোনেশিয়াকে।

বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি এবং ভাগ্যন্বেষণে দালালের প্ররোচণায় পড়ে বিদেশ যেতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিচ্ছে শ্রমিকরা। বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ এ ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিচ্ছে। ফলে অপহরণ ও অপমৃত্যুর শিকার হচ্ছে দেশের এই জনশক্তি, যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।

মানবপাচার বন্ধে নিতে হবে উদ্যোগ। বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। মানবপাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সক্রিয় করতে হবে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন কোনো রকম ছাড় দেয়া যাবে না। কঠোর হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। মোট কথা অবৈধভাবে শ্রমিক পাঠানোর এই পথ বন্ধে নিতে হবে যুগান্তকারী ভূমিকা।

লেখক- আহমাদুল কবির, সৌজন্যে- জাগো নিউজ