Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

agqবড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এয়ারক্রাফট এজিকিউ। বুধবার (৬ মার্চ) হায়দারাবাদ থেকে সি-চেক সেরে দেশে আসার পথেই এয়ারক্রাফটটির ইঞ্জিনের ওপরে থাকা ব্ল্যাংকেট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে ইঞ্জিন অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং ইঞ্জিন অয়েল বিপজ্জনক মাত্রায় চলে আসে। এ সময় আকাশেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিমানটিতে ওই সময় কোনো যাত্রী ছিল না বলে জানা গেছে।

পুড়ে যাওয়া ব্ল্যাংকেটের স্প্লিন্টার ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করায় সেটি উত্তপ্ত হয়। এ সময় অতিমাত্রার গরমে ইঞ্জিন অয়েল নিচের বিপজ্জনক লাইনে চলে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিমানের প্রকৌশল বিভাগের একটি সূত্র জানায়, একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে ‘ড্যাস-৮ এজিকিউ’। এয়ারক্রাফটটিকে এওজি (এয়ারক্রাফট অন গ্রাউন্ড) অবস্থায় রাখা হয়েছে।

chardike-ad

তবে এয়ারক্রাফটটির ইঞ্জিন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে ইতোমধ্যে এয়ারক্রাফটটির নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান কানাডার বোম্বায়ডিয়ার কোম্পানিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সহসাই বোম্বায়ডিয়ার প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসবেন বলে জানা গেছে। তবে কত দিনের মধ্যে এয়ারক্রাফটটি আবার অপারেশনে আসতে পারবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

প্রকৌশল বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এয়ারক্রাফটটির নিউমেটিক লাইনের পাইপে ক্ল্যাপ খোলা ছিল। যে কারণে অয়েল লিক করায় এই সমস্যা তৈরি হয়।

জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারি এয়ারক্রাফটটিকে ভারতের হায়দারাবাদের ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’তে পাঠানো হয় ‘সি-চেক’ (বড় ধরনের মেরামত) করানোর জন্য। ১৫ দিনে ‘সি-চেক’ শেষ করার কথা থাকলেও সময় লেগেছে প্রায় দেড় মাস। আবার সমস্যা সারানোর বদলে নতুন সমস্যা তৈরি করে এয়ারক্রাফটটিকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এই ঘটনার পর ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’র সি-চেকের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, ‘কেউ বিশেষ কোনো সুবিধার বিনিময়ে এমন অনভিজ্ঞ কোম্পানির দারস্থ হলেন কিনা-সেটি খুঁজে বের করা দরকার।

ওই কর্মকর্তা জানান, এই ধরনের চেক সম্পন্নের পর এবং এয়ারক্রাফট ডেলিভারি নেয়ার আগে সব ঠিক আছে কি-না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিজস্ব মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সর্বশেষ একবার দেখে নিতে হয়। ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’ থেকে ‘সি-চেক’ শেষে বিমানের কোনো মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সব দেখে আনা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, খরচ বাঁচানোর জন্যে এই কাজটি করা হয়েছে। এতে করে ফলাফল হয়েছে উল্টো।

‘সি-চেক’ এর জন্য ভারতীয় ‘জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানি’কে কত টাকা প্রদান করা হয়েছে-শুক্রবার দুপুরে এমন প্রশ্নের জবাবে বিমানের অর্থ বিভাগের কন্ট্রোলার মঞ্জুর ইমাম বলেন, ‘এটি এই মুহূর্তে না দেখে বলতে পারব না। কখনো এক লাখ ডলার আবার কখনো এর কমবেশি দেয়া হয়েছে। রোববার (১০ মার্চ) অফিস গিয়ে অংকগুলো দেখে বলতে হবে।’

‘সি-চেক’ করে আনার পথেই এমন ঘটনা কী কারণে ঘটতে পারে বলে মনে করেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘এয়ারক্রাফটে যে কোনো সময় ট্যাকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজিকিউর ক্ষেত্রে কী কারণে এমনটি ঘটল আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি।’ তবে অপারেশনে এসব ঘটনা স্বাভাবিক বলে দাবি করেন মোসাদ্দিক আহমেদ।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত এই উড়োজাহাজ সংস্থার প্রকৌশল বিভাগ উড়োজাহাজের বড় ধরনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে ২০১৮ সালের আগস্টে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছিল। বিমানের ওই সক্ষমতার কথা গণমাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের নিজস্ব হ্যাঙ্গারে এরই মধ্যে তারা সম্পন্ন করেছে একটি বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের সি-চেক। এতে অন্য দেশে উড়োজাহাজ পাঠানোর সময় বাঁচানোর পাশাপাশি সাশ্রয় হয়েছে ৪ লাখ ডলার।

নির্দিষ্ট সময় অন্তর উড়োজাহাজে বড় ধরনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়, যা ‘সি-চেক’ নামে পরিচিত। বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআরের মতো উড়োজাহাজের ‘সি-চেক’ করতে সময় লাগে প্রায় দুই সপ্তাহ।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ