মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ কুয়েতে প্রায় তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো বাংলাদেশি পরিবার। এসব পরিবারের অধিকাংশই ব্যবসায়-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকে। শত ব্যস্ততায় প্রিয়জনদের ঠিকমতো সময় দেয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। প্রবাসী নারীরা স্বামীদের পাশাপাশি সংসারের আয় বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে চলেছেন। রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতেও প্রবাসী নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে কথা হয় কুয়েত প্রবাসী নাসরিনের সঙ্গে। বলেন, ‘আমরা মনে করি একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে তার জীবন শেষ। আসলেই কি তাই! এ ধরনের চেতনা থেকে আমাদের বের হতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে তবেই আমরা অধিকার বুঝে পাব। আমাদের চেতনাগত কারণেই দিনে দিনে নারীরা পিছিয়ে পড়েছে। তবে এটাও ঠিক বিয়ের পরের জীবনটা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। খুব কম মেয়েরাই পারে বিয়ের পরে ভালো কিছু করে দেখাতে। সংসার নামক অদৃশ্য বেড়াজালে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে সবাই। অনেকে এর ব্যতিক্রমও হয় তবে সংখ্যায় কম।’
প্রবাসে থেকেও দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নাসরিন আক্তার মৌসুমী। দেশের বাড়ি কেরানীগঞ্জ। ১৯৯৯ সালে কুয়েত পাড়ি জমান। স্বামী আলী নেওয়াজ দেশটিতে ব্যবসা করেন। তিন সন্তানের জননী বড় মেয়ে কুয়েত থেকে কলেজ পাস করার পর ডাক্তারি এমবিবিএস করছে। ছোট দুই ছেলে একজন ক্লাস নাইনে অন্যজন ওয়ানে একটি ইন্ডিয়ান স্কুলে পড়ছে।
নাসরিন ২০১৫ সাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখিতে যুক্ত। পরে তিনি প্রবাসীদের সুখ দুঃখ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টকশোতে তুলে ধরেন। এ বছর একুশে বইমেলায় তার সম্পাদনায় প্রথম যৌথ কাব্যগ্রন্থ স্বপ্নের সাতকাহন প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে জয়যাত্রা টেলিভিশনের কুয়েত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নাসিমা সরকার ২০ বছর আগে কুয়েত পাড়ি জমিয়েছেন। বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। নাসিমার দুই ছেলে এক মেয়ে কুয়েতের সেন্ট্রাল স্কুলে পড়াশোনা করছে। স্বামী ইমরান হোসেন, তিনি ইলেকট্রিসিটিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। সংসারের দেখাশোনার পাশাপাশি নাসিমা ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই, দেশে-বিদেশে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীদের জয়জয়কার।
ঢাকার মেয়ে আমেনা আক্তার রেনু ছেলে-মেয়ে নিয়ে কুয়েতের সালমিয়া অঞ্চলে থাকেন। দুই সন্তান কুয়েতের একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে। স্বামী আরিফ দেশটির আমেরিকান আর্মির ক্যাম্পে ম্যান্টেন্যান্স ওপারেশন ম্যানেজার হিসেবে রয়েছেন। স্ত্রী রেনু আমেরিকান ফুড কোম্পনিতে কর্মরত।
এই কোম্পানিতে তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি নারী। দুই যুগেরও বেশি সময় কাজ করে চলেছেন। দক্ষতার সঙ্গে কাজ করায় কোম্পানি সন্তুষ্ট হয়ে রেনুকে দু’বার স্টার অব মানথ সম্মাননা দিয়েছে। বর্তমানে তিনি ওই কোম্পানির সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি নারীরা যদি আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পায় তাহলে অনেক ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে। পরিবারের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে সক্ষম হবে।’
সাথী আক্তার চৌধুরী বিক্রমপুরের শ্রীনগরের মেয়ে। তার মেয়ে সাহরা হোসেন দ্বাদশ ফাইনাল পরীক্ষার্থী। ছেলে সাহিল হোসেন কানাডাতে বিবিএ পড়াশোনা করছেন। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি প্রায় ১৫ বছর যাবত কুয়েতে কাজ করছেন। কুয়েতের আল গানিম মেডিসেন কোম্পনিতে ১১ বছর কাজ করার পর ডাবল শিপটিং ডিউটির হওয়াতে ওখান থেকে রিজাইন দিয়ে বর্তমানে তিনি ট্রাফিকো ট্রাভেলসে তিন বছর ধরে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি নারীরা যদি আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পায় তাহলে তারা আরও ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে। পরিবারের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে সক্ষম হবে।’
লেখক-সাদেক রিপন, সৌজন্যে- জাগো নিউজ