দূতাবাসের সত্যায়ন ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর বহির্গমন ছাড়পত্রই ছিল না, তারপরও এমন ভিসায় হাজার হাজার কর্মীকে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতারে পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাদের অনেকে এখন বিপদে পড়ে দেশটিতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন সফর নামক কারাগারে।
কাতার সরকার এবং ঢাকার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে অভিবাসন বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৮ সালে যেসব কর্মী কাতারে গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৬ হাজারই অবৈধ। এভাবে দেশটিতে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অবশ্য এর জন্য কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের (শ্রম উইং) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন তারা।
কাতারে অবস্থানরত বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানিকারক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ জয়নাল আবেদিন জাফর গতকাল শনিবার বলেন, আমার জানা মতে, কাতার সরকারের রেকর্ড অনুযায়ী ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৯ জন শ্রমিক বৈধভাবে এসেছেন, কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের বিএমইটির পরিসংখ্যানে কাতারগামী কর্মীর তথ্যে উল্লেখ রয়েছে, ৭৬ হাজার ৫৬০ জন। অর্থাৎ ৩৬ হাজার ৭৯ জন কর্মী অবৈধভাবে এসেছে।
তারা কি সবাই এয়ারপোর্ট ‘কন্ট্রাক্ট’ করে গেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডেফিনিটলি। তাহলে তারা আর কিভাবে আসবে? তারা কি সেখানে এখন সমস্যার মধ্যে রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না দিয়ে বলেন, না, প্রবলেমে পড়েনি তারপরও… কাতারের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়াই বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু অ্যাম্বাসির কিছু লোকের ধান্ধার কারণে।
‘ধান্ধা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোম্পানির লোকজন দূতাবাসে যাওয়ার পরও ঠিকমতো সত্যায়ন করেন নাই। অ্যাম্বাসিতে যাওয়ার পর তাদের ঘুরাইছে। এতে ওরা আপসেট হয়ে গেছে। অ্যাম্বাসির কর্মকর্তারা তাদের ওমুক এজেন্সি থেকে আনো, তমুক এজেন্সি থেকে নিয়ে এসো বলে ঘুরিয়েছে। এগুলো করেই মূলত শ্রমবাজারের ক্ষতি করেছে। ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে এখন দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাক এখন তো আর অ্যাটাসটেশন সিস্টেম নাই। ঝামেলাও নাই।
কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদের সাথে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি। বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল সৌদি আরব ওমান ও কাতারের বেহাল শ্রমবাজার সরেজমিন দেখতে গত শুক্রবার রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন। ৯ দিনের সরকারি সফরে বর্তমানে প্রতিনিধিদলটি সৌদি আরবের রিয়াদে রয়েছেন।
আজ রোববার দেশটির শ্রমমন্ত্রীর সাথে প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা। এরপর ওমান হয়ে ৭ মার্চ কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে রওনা হবেন তারা।
এ দিকে সত্যায়ন জটিলতার কারণে কাতারে কর্মী যাওয়ার হার প্রতিনিয়ত কমতে থাকায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়াই বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। এর পর থেকেই দেশটিতে কর্মী যাওয়ার হার যেমন বেড়েছে তেমনি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কাতারগামী কর্মীদের ভোগান্তিও অনেকটা কমে এসেছে।
কাতারের সফর জেলে ২৯ দিন কারাভোগ করে খালি হাতে দেশে ফেরা প্রতারিত যুবক বলেছেন, বর্তমানে কাতারে অনেক বাংলাদেশী বিপদের মধ্যে রয়েছেন। কারাগারে বন্দী বাংলাদেশীর সংখ্যাও কম নয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই ভিসা জটিলতা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) মো: আতাউর রহমানের সাথে গতকাল সন্ধ্যার আগে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। তবে তিনি তার দফতরে এ প্রতিবেদককে আগেই বলেছিলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আমার ডিজি মো: সেলিম রেজা স্যার এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এরপর আমাকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, এখন থেকে কাতারগামী কর্মীদের দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়াই বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া যাবে। এমন নির্দেশনা পেয়ে আমার দফতর থেকে কর্মীদের সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ক্লিয়ারেন্স দেয়া হচ্ছে। অবশ্য তিনি বলেছিলেন, এভাবে কর্মী গেলে আবার ঝুঁকিও আছে।
সৌজন্যে- নয়া দিগন্ত