মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। চলমান বাংলাদেশিদের দ্বারা দুটি ঘটনায় সরকার শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অতি সম্প্রতি প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় এক মালয়েশিয়ান তরুণীর মুখে ধারাল ছুরি দিয়ে আঘাত করে বাংলাদেশি যুবক সাইদুল ইসলাম। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে শুক্রবার মালয়েশিয়ার আদালতে হাজির করা হয়।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার ও মালয়েশিয়ান তরুণীকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করায় দণ্ডবিধি ৩২৬ ধারা অনুযায়ী বিচারক ওই যুবককে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন। সরকারপক্ষের আইনজীবী আসরাফী কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, সাজাপ্রাপ্তকে কোনো জামিনের আওতায় আনা হবে না।
সংবাদমাধ্যম বারনামার সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরে ওই তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন বাংলাদেশি যুবক সাইদুল। কিন্তু ওই তরুণী তার প্রেমে সাড়া দেননি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানী কুয়ালালামপুরের পার্শ্ববর্তী কোতা দামানসারাতে একটি শপিংমলের কাছে ফের ওই তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। প্রতিবারের মতো এবারও তাকে প্রত্যাখ্যান করেন ওই তরুণী। এতে রেগে গিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে ওই মালয়েশিয়ান তরুণীর মুখে আঘাত করে সাইদুল।
পেতালিং জায়া জেলা পুলিশ প্রধান সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জনি চে দিন জানান, ২৪ বছর বয়সী ওই তরুণী সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ঘটনাটি জানান। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মালায় মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, ওই নারীর ঠোঁটের ওপরে প্রায় পাঁচ ইঞ্চির মতো কেটে গেছে।
আহত নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরে আটক করা হয় ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশি সাইদুলকে। দোষী সাইদুল স্থানীয় একটি মোবাইল শপের সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার জের ধরে স্থানীয় মালয়দের মধ্যে বাংলাদেশ বিরোধী ক্ষোভ বিরাজ করছে।
চলতি মাসে বাংলাদেশি দুই অপহরণকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। মালয়েশিয়ার জাতীয় দৈনিক স্টার অনলাইনে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশটির তামান মুডুন, বাতু ৯ চেরাস এলাকার একটি বাড়ি থেকে অপহৃত এক বাংলাদেশিকে উদ্ধারের সময় পুলিশের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন বাংলাদেশি মারা যান।
পুলিশের দাবি, তারা অপহরণকারী ছিল তাদের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ বছর। তবে পুলিশ নিহত এবং উদ্ধারকৃত বাংলাদেশির নাম এখনো প্রকাশ করেনি। পুলিশ বলছে, নিহত ২ বাংলাদেশির কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না।
কাজাং ওসিপিডির সহকারী কমিশনার আহমেদ জাফির ইউসুফ বলেন, ‘কুয়ালালামপুরের পুলিশ একটি সংঘবদ্ধ চক্রকে ধরার জন্যে ওৎ পেতে ছিল। ঘটনার দিন দিবাগত রাতে চেরাসের বাতু ৯ এবং তামান মুদুনের একটি ছোট স্থানে অবস্থান করছিলেন তারা। রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশ বাড়িটিতে অভিযান চালায়। সেখানে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে রাখা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। অভিযান চলাকালীন সময়ে বাড়িটি থেকে অপহরণকারীরা গুলি ছুড়তে শুরু করে। আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা গুলি ছোড়ে পুলিশ।’
জাফির ইউসুফ বলেন, ‘আমরা সফলভাবে অপহরণে আটক ব্যক্তিকে মুক্ত করি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সেন্তুল থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি ৯এমএম পিস্তল এবং একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিহত ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোনো ধরনের ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ৩০৭ ধারায় পেনাল কোর্টে এই মামলাটির তদন্ত চলছে’।
পুলিশ বলছে, নিহত ২ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের অপহরণ করে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। মুক্তিপণের দাবিতে এ পর্যন্ত তারা ২.৫ মিলিয়ন মালয় রিঙ্গিত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
চলতি মাসে এ দুটি ঘটনার সূত্র ধরে আরও কিছু ঘটনার পেছনে বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পৃক্ততা কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য করছে মালয়েশিয়া সরকারকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ ধরনের অন্যায়মূলক কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কতিপয় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ-পিআর প্রাপ্তদের পিআর বাতিলকরণ, বিভিন্ন প্রকারের ভিসা প্রদান বন্ধ, ইমিগ্রেশনে আটকে দিয়ে দেশে ফেরত, অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশিদের গ্রেফতার ইত্যাদি।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ