Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মোঃ মহিবুল্লাহ, সিউল, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪:

ছোট্ট ক্রিকেট দুনিয়ার দশটি ‘পূর্ণ সদস্য’ দেশের চারটিরই অবস্থান এশিয়ায়, আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে দক্ষিণ এশিয়ায়। এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণে তাই তিন দশককাল আগে শুরু হয় ‘এশিয়া কাপ ক্রিকেট’। ১৯৮৪ সালে প্রথম আসরে অংশ নেয় ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলংকা। ’৮৬ সালে পরের আসরেই যোগ দেয় বাংলাদেশ। এরপর দীর্ঘ ১৮ বছর আর প্রতিযোগী বাড়ে নি। মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশে শুরু হতে যাওয়া ’১৪ টুর্নামেন্টে পঞ্চম দল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে আফগানিস্তান।

chardike-ad

দু’ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক অস্থিরতায় মাঝেমাঝেই থমকে গিয়েছে এশিয়া কাপের পথচলা। এবারের এশিয়া কাপ তাই টুর্নামেন্টটির দ্বাদশ আসর। ১০ দিনের ক্রিকেট উৎসব ২৫ ফেব্রুয়ারী শুরু হয়ে চলবে ৬ মার্চ পর্যন্ত।এ যাবত অনুষ্ঠিত হওয়া ১১টি আসরের পাঁচটিতে ভারত, চারটিতে শ্রীলংকা ও দুটিতে পাকিস্তান শিরোপা যেতে। ’১২ এশিয়া কাপে শেষ ওভারের ব্যর্থতায় প্রথম এশিয়া কাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও স্বপ্নভঙ্গ হয় ক্রিকেট দুনিয়ার উদীয়মান শক্তি বাংলাদেশের। এবারই প্রথম টুর্নামেন্টের টিকিট পাওয়া টীম আফগানিস্তানের জন্য এটি নিজেদের প্রমাণ করার প্রথম বড় সুযোগ।

imagesবিশ্বকাপের পর একদিনের ক্রিকেটে ২য় বৃহত্তম টুর্নামেন্টটির অন্যতম আকর্ষণ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের ‘হাই ভোল্টেজ’ লড়াই। দু’ দেশের শীতল রাজনৈতিক সম্পর্ক মাঠের উত্তাপের পারদটা আরও চড়া করে দেয়। তবে সেই রাজনৈতিক কারনেই আবার দু’দেশের দ্বৈরথ দেখার সুযোগ মেলে কালেভদ্রে। ’১১ বিশ্বকাপের পর দু’ দল নিজেদের মধ্যে মুখোমুখি হয়েছে পাঁচটি ওয়ানডে ও তিনটি টিটোয়েন্টিতে। সর্বশেষ গত জুনে বারমিংহামে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে জয়লাভ করে ধোনির দল। ২রা মার্চ মিরপুরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি ক্রিকেটপ্রেমীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাতে যাচ্ছে।

টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ঢাকায় এসেছে নভেম্বরে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে প্রতিপক্ষের মাটিতে ২-১ ও ডিসেম্বরে দুবাইয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে। তবে অন্যতম ফেভারিট টীম পাকিস্তানের শৈল্পিক ক্রিকেট কিছুটা হলেও রং হারাবে ‘বুম বুম’ খ্যাত হার্ড হিটিং ব্যাটসম্যান কাম লেগব্রেক গুগলি স্পিনার শহীদ আফ্রিদীর অনুপস্থিতিতে। চোয়ালে আঘাত পেয়ে পুরো টুর্নামেন্টেই খেলা হচ্ছে না পাকিস্তানি অলরাউন্ডারের। মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার মুখোমুখি হচ্ছে মিসবাহ বাহিনী।

শিরোপার আরেক দাবীদার ভারতও মাঠে নামবে দারুণ ফর্মে থাকা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ছাড়াই। ইঞ্জুরির কারনে দশ দিনের বিশ্রাম দেয়া হয়েছে ভারতের নিয়মিত দলপতিকে। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আরেক ইনফর্ম ব্যাটসম্যান ভিরাট কোহলি। ধোনির অনুপস্থিতিতে উইকেটের পিছনে থাকবেন দীনেশ কার্তিক। টুর্নামেন্টের আগে নিউজিল্যান্ডে ও দক্ষিনআফ্রিকায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে যথাক্রমে ০-৪ ও ০-২ ব্যবধানের ওয়ানডে সিরিজ পরাজয় টীম ইন্ডিয়াকে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপ অভিযান শুরু করবে ভারত।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ও টিটোয়েন্টি সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে এশিয়া কাপ ও পরবর্তী টিটোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপের প্রস্তুতিটা ভালোভাবেই অরে নিয়েছে শ্রীলংকা। গেলো ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-৩ ব্যবধানে হার ও এর আগে নিউজিল্যান্ডের সাথে ১-১ ব্যবধানে ড্র লঙ্কান সমর্থকদের কপালে ভাঁজ ফেললেও প্রেরণা জোগাবে গত জুলাইয়ে ঘরের মাঠে দ. আফ্রিকাকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয়ার স্মৃতি। ইঞ্জুরি সমস্যা পিছু ছাড়ে নি শ্রীলংকা দলেরও। অন্যতম নির্ভরযোগ্য স্পিনার রঙ্গনা হেরাথকে ছাড়াই এশিয়া কাপে লড়বে শ্রীলংকা। ব্যাট-বলের গড়পড়তা পারফরম্যান্সে শিরোপাদৌড়ে এগিয়েই থাকবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের দল।

এই মুহূর্তে ইঞ্জুরি, নিষেধাজ্ঞা আর বাজে ফর্মে জর্জরিত দলটির নাম বাংলাদেশ। ঘাড়ে চোট পেয়ে তামিম ইকবাল দলের বাইরে, ক্যামেরার সামনে অশোভন আচরণ করে প্রথম দুই ম্যাচে নিষিদ্ধ হয়ে আছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ফর্মহীনতায় দল থেকে ছিটকে পড়েছেন একসময়ের নিয়মিত পারফর্মার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইঞ্জুরিপ্রবণ মাশরাফিও পুরোপুরি ফিট নন। মাঠে থেকে দলের নেতৃত্ব দিলেও আঙ্গুলের চোট নিয়ে উইকেটের পিছনে থাকা হচ্ছে না মুশফিকের। সদ্য সমাপ্ত শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটিং, বোলিংয়ের দুর্দশাকে ছাড়িয়ে গেছে ফিল্ডিংয়ে নজিরবিহীন ব্যর্থতা। সবমিলিয়ে আগের আসরের রানার আপরা এবারও দারুণ কিছু করার স্বপ্নটা সেভাবে দেখাতে পারছে না।

২০০৮ সালে আইসিসির ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগের ডিভিশন ফাইভ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা আফগানিস্তানের গত পাঁচ বছরে উন্নতির গ্রাফটা কোন সমীকরণে ধারণ করা সম্ভব নয়। অকল্পনীয় দ্রুততায় একের পর এক উন্নতির সিঁড়ি ভাঙছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ক্রিকেট যোদ্ধারা। ইতোমধ্যেই তাঁরা নিশ্চিত করেছে ’১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিজেদের অংশগ্রহণ। টিটোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আগে ১০ নম্বরে অবস্থান করা দলটি অংশ নিয়েছে ‘১০ ও ‘১২ টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। এ যাবত খেলা ২৭টি একদিনের আন্তর্জাতিকে ১৬টি জয় ১১টি পরাজয়ে বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল কেবল দুটি, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের সাথে সে দুটিতে অবশ্য জয়ের মুখ দেখা হয় নি। তবে মিসবাহ-মুশফিকদের চোখে ‘বিপজ্জনক’ দলটি নিজেদের দিনে অঘটন ঘটিয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ২৭ ফেব্রুয়ারী ফতুল্লায় মোহাম্মদ নবীদের প্রথম ম্যাচটা পাকিস্তানের বিপক্ষে।

উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের ‘ক্ল্যাসিক’ প্রদর্শনী উপভোগ করতে মুখিয়েই আছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী সবক’টি দেশেই ক্রিকেট এখন সবচেয়ে বড় উন্মাদনার নাম। সে উন্মাদনার আগুন উত্তাপ ছড়াবে মাঠেও। মাঠের লড়াইয়ে উত্তাপটুকুর পরিমিত ব্যবহার যে দল করতে পারবে, শেষ হাসি তাঁদেরই।