মোহাম্মদ হানিফ, সিউল থেকে
দক্ষিণ কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী আনিয়াং মসজিদে দুইদিনব্যাপী ইসলামিক কর্মশালাটি শেষ হয়েছে। প্রতিবারের মতই দক্ষিণ কোরিয়ার নববর্ষ ‘সল্লাল’ ছুটিতে দুইদিন ব্যাপী ইসলামিক কর্মশালার আয়োজন করে আনিয়াং আল রাবিতা মসজিদ কমিটি। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা লুৎফুর রহমান। শত শত ধর্মপ্রাণ প্রবাসী মুসলমান এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
গতকাল রোববার বিকেল ৪টা থেকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়ে আজ সোমবার দুপুর ১টার দিকে কর্মশালাটি শেষ হয়েছে। মাওলানা লুৎফুর রহমান পবিত্র কোরআন হাদীসের আলোকে যুগে যুগে মহান আল্লাহ তায়লার প্রেরিত নবী-রাসুল এবং ইসলামের পরাশক্তি কাফের মুশরিকদের ধ্বংসের কারণ তুলে ধরেন। হাদিস অনুসারে, কিয়ামতের পূর্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একজন নেতা আসবেন, যিনি পৃথিবীতে পুনরায় খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন। পৃথিবীতে ইমাম মাহদীর আগমনের সম্পর্কেও তিনি ইঙ্গিত দেন।
জীবদ্দশায় ৫৬ বছরের এই তাফসিরকারক আরো বলেন, “এই কোরআন পড়ে বুঝা যায় হযরত আবু বকর(রাঃ) মত একজন ধার্মিক, হযরত আলী (রাঃ) এর মত তার্কিক, হযরত ওমর (রাঃ) মত একজন শাসক, খালেদের মত একজন জেনারেল, আবু উবায়দার মত একজন দক্ষ সেনা পরবর্তী পাঁচশত বছর দিকে একটু নজর দিলে দেখা যায় দুনিয়াতে এতো টানাপড়োন এতো কিছুর পরেও আজও সারা দুনিয়া শিকার করে ইসলামের আবির্ভাবের পরে পরবর্তী একশত বছর দুনিয়ার ইতিহাসে সোনালি যুগ ছিলো। এ্ই সোনালী যুগের সাথে কোনো যুগকেই তুলনা করা যায় না। আর এই সোনালী যুগ সৃষ্টি করার মূলমন্ত্র নিয়ে এসেছিলো পবিত্র কোরআন। যার জন্য এই কোরআন হলো প্রথম একমত্র লক্ষ্য, মুখ্য ও উদ্দেশ্য।এই কোরআন কে বুঝতে হলে নবীকে লাগবে। আবার নবীকে জানতে হলে কোরআনকে লাগবে।একটা বাদ দিয়ে আরেকটা বুঝা যাবে না। যে কোরআন আমরা তেলাওয়াত করি এটা হলো ফিলোসফিক্যাল কোরআন।কোরআন রূপি দর্শন। রাসুলের তেইশ বছর নবুয়ত জিন্দেগী এটি ছিলো পেক্টিক্যাল কোরআন”।
একটি বেধর্মী দেশেও ইসলামের দায়ীদের দাওয়াতী কাজ অব্যাহত দেখে দক্ষিণ কোরিয়ার সকল বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্য দোয়া করেন লুৎফুর রহমান সাহেব। ইসলামিক কর্মশালার সভাপতিত্বে ফেরদৌস খান বলেন, ইসলামকে জানার জন্য এবং আল্লাহর দ্বীনকে তার জমিনে প্রতিষ্ঠার লক্ষে প্রচণ্ড শীত বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ইসলামিক কর্মশালায় উপস্থিত হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য নেক হায়াত এবং সুস্থতা কামানা করছি।
ইসলামিক কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, আনিয়াং মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা সাইয়েদ আব্দুর রহমান সাহেব, হাফেজ জামাল উদ্দিন, যায়েদ হোসাইন, মোহাম্মদ আলী খান প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিতিদের ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে যথাযত প্রশ্নের উত্তর দেন কর্মশালার প্রধান অতিথি। এছাড়াও ছিলো ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কর্মশালায় ইসলামিক সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন নবাংকুর শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা। আনিয়াং আল রাবেতা মসজিদ ইসলামিক কর্মশালা ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বসাধরণের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া এবং কোরআন সুন্নাহর আলোকে মুসলিম উম্মাহর আত্মগঠনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ আর্জনের লক্ষ্যে প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও শেষ শনিবার রাতে শব্বেদারী তথা রাত্রি জাগরনের মাধ্যমে ইবাদত-বন্দেগীর ব্যবস্থা করা হয়। এতে দ্বীনের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে একজন আলোচক বিষয়ভিত্তিক ইসলামের বিভিন্ন দিক সবার সামনে তুলে ধরেন।
মোহাম্মদ হানিফ, সাংবাদিক