মুশফিকুর রহীম যেন হিমালয়ের মত অবিচল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন রাজশাহী কিংসের বোলারদের সামনে। শুধু দাঁড়িয়ে থাকাই নয়, রানও তুললেন ঝড়ের গতিতে। মুশফিকের ঝড়ের কবলে পড়েই এই ম্যাচে আর বাজিমাত করতে পারলো না মেহেদী হাসান মিরাজের রাজশাহী কিংস। শেষ পর্যন্ত হারতে হলো ৬ উইকেটের ব্যবধানে।
১৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৬ রানে প্রথম উইকেট, ২৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট এবং ৩০ রানে তৃতীয় উইকেট পড়ার পর সবাই ধরে নিয়েছিল এই ম্যাচে নিশ্চিত হারতে হচ্ছে চিটাগং ভাইকিংসকে। এরপর ৭১ রানের মাথায় চলে গিয়েছিল চতুর্থ উইকেটও।
কিন্তু মিডল অর্ডারে (পঞ্চম উইকেট জুটিতে) মুশফিকুর রহীম আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করেই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলো মুশফিকুর রহীমের দল। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৬৪ রানে এবং মোসাদ্দেক অপরাজিত থাকেন ৪৩ রান করে। শুধু তাই নয়, ৭ ম্যাচ শেষে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে নিরঙ্কুশ অবস্থান ধরে রেখেছে চিটাগং ভাইকিংস।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে চিটাগং ভাইকিংসকে কেউ গোনায়ও ধরতে চায়নি। দলটিতে ভালোমানের খেলোয়াড় নেই, তারকা নির্ভর বলতে যাকে বোঝায়, তেমন দল গড়তে পারেনি চিটাগং, এমনকি বিদেশি খেলোয়াড়ের সংগ্রহও আহামরি নয়- এসব কারণে চিটাগং ছিল এবারও হিসাবের বাইরে।
কিন্তু সেই চিটাগং ভাইকিংসই এখন সবারে আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করার পথে। ৭ ম্যাচের ৬টিতেই জয় এবং শুধুমাত্র একটিতে হার। চিটাগংয়ের এই অগ্রযাত্রায় অসামান্য অবদান রেখে চলছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। আজও তার ব্যাটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো চট্টগ্রামের দলটি।
ইনিংসের শুরুতেই ক্যামেরন ডেলপোর্টের উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে চিটাগং। এরপর ইয়াসির আলিকে নিয়ে ঝড় তোলেন আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ। ইয়াসির আলি এক প্রান্তে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ১৭ বল মোকাবেলা করে এরই মধ্যে শাহজাদ নিজের নামের পাশে যোগ করেন ২৫ রান। ছিল ৫টি বাউন্ডারির মার। ছক্কা নেই।
কিন্তু ইয়াসির আলি যেই না নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেলেন, অমনি আউট হয়ে গেলেন আরাফাত সানির বলে। একই ওভারে মোহাম্মদ শাহজাদের উইকেটও তুলে নেন আরাফাত সানি। ২৯ এবং ৩০ রানে পরপর দুই উইকেট হারিয়ে মহা বিপদে চিটাগং। এ সময় মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে জুটি গড়েন আফগান রিক্রুট নজিবুল্লাহ জাদরান।
এ দুজনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৪১ রানের মূল্যবান জুটি। জাদরান ১৯ বল খেলে নিজের নামের পাশে যোগ করেন ২৩ রান। ২টি বাউন্ডারির সঙ্গে মারেন ১টি ছক্কার মারও। কিন্তু দলীয় ৭১ রানের মাথায় সেই আরাফাত সানির ঘূর্ণিতেই বিভ্রান্ত হয়ে উইকেট দিয়ে আসেন নজিবুল্লাহ জাদরান।
কিন্তু আরাফাত সানির বলে না হয় অন্যরা বিভ্রান্ত হলেন, মুশফিক তো আর হন না। সুতরাং, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়লেন মুশফিক। ৮৮ রানের অসাধারণ এক জুটি গড়ে অপরাজিত থেকে যান মুশফিক আর মোসাদ্দেক। ৪৬ বল খেলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। ৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কার মার মারেন তিনি।
২৬ বলে ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কার মারও মারেন তিনি। মূলতঃ মুশফিককে যোগ্য সহযোগিতা দিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন সৈকতই। এমনকি মোস্তাফিজের বলে শেষ ওভারের চতুর্থ বলটিকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে জয়ের শেষ কাজটি তিনিই করেছিলেন।
আরাফাত সানি ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেও দলকে জেতাতে পারলেন না। এমনকি শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান দুই বল ডট দিয়েও না। কারণ, ওভারের চতুর্থ বলেই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বাউন্ডারি মেরে দেন। বাকি উইকেটটি নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে লরি ইভান্সের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে ১৫৭ রানের পুঁজি গড়ে তোলে রাজশাহী কিংস। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ইভান্স এই ম্যাচেও ছিলেন মারমুখি। ৫৬ বলে তিনি ৭৪ রান করে খালিদ আহমেদের বলে আউট হন। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কার মার।
সৌম্য সরকার ইনিংস ওপেন করতে নেমে আউট হন মাত্র ৩ রান করে। মার্শাল আইয়ুব আউট হন ১ রান করে। ৮ রানে ২ উইকেট পড়ার পর রায়ান টেন ডেসকাটকে নিয়ে ৫৪ রানের জুটি গড়েন লরি ইভান্স। ২৮ রান করে আউট হন ডেসকাট। এরপর ৫ রান করে বিদায় নেন জাকির হাসান।
শেষ দিকে ক্রিশ্চিয়ান ঝঙ্কার ঝড় তোলেন। ২০ বলে তিনি করেন ৩৬ রান। সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ ৪ বলে করেন ১০ রান। চিটাগংয়ের খালিদ আহমেদ নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন রবি ফ্রাইলিংক, সানজামুল ইসলাম এবং আবু জায়েদ রাহী।
লরি ইভান্সের ৭৪ রানের ইনিংসকে ম্লান করে দিয়ে অপরাজিত ৬৪ রান করে দলকে জেতানোয় ম্যাচ শেষে সেরার পুরস্কার তুলে দেয়া হয় মুশফিকুর রহীমের হাতেই।