Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

thai-yung-hoeউত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগী সাবেক এক কূটনীতিক সতীর্থ আরেক উত্তর কোরীয় কর্মকর্তাকে পরামর্শ দিয়েছেন, পক্ষত্যাগ করে তিনি যেন যুক্তরাষ্ট্রে চলে না যান। বরং থিতু হওয়ার জন্য বেছে নেন দক্ষিণ কোরিয়াকে। দুই কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণ এর মাধ্যমেই সম্ভব হয়ে উঠবে। অর্থ না থাকুক দক্ষিণ কোরিয়াতে গেলে কাজ করা যাবে দুই কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণ নিশ্চিতে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পরামর্শদাতা উত্তর কোরীয় সাবেক কূটনীতিক থায়ে ইয়ং হো। আর যাকে তিনি এই পরামর্শ দিয়েছেন তার নাম জো সং গিল।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার সাবেক কূটনীতিক থায়ে ইয়ং হো ২০১৬ সালে নিজ দেশের পক্ষ ত্যাগ করে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে চলে গিয়েছিলেন। স্মৃতিকথা প্রকাশ উপলক্ষে ২০১৮ সালের মে মাসে থায়ে ইয়োং হোকে দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ‘পাসওয়ার্ড ফরম দ্য থার্ড ফ্লোর’ নামের স্মৃতিকথায় থায়ে ইয়ং হো উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ‘ধৈর্য্যহীন, হিতাহিত জ্ঞানহীন এবং হিংস্র’ আখ্যায়িত করেছিলেন।

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদ সদস্যরা বৃহস্পতিবার (০৩ জানুয়ারি) জানিয়েছেন, ইতালিতে উত্তর কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ছিলেন জো সং গিল তিনি হঠাৎ করে কাউকে কিছু না বলে সস্ত্রীক দূতাবাস ছেড়ে চলে গেছেন। গত শুক্রবার ইতালির লা রিপাবলিকা সংবাদপত্র জানিয়েছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং এখন ইতালীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হেফাজতে আছেন।

এখবর সামনে আসার পর আসার পর নিজের ওয়েবসাইটে জো সং গিলের প্রতি একটি খোলা চিঠি লিখেছেন থায়ে ইয়ং হো। যুক্তরাজ্যে একসময় নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার সাবেক এই ডেপুটি অ্যাম্বাসেডরের পরামর্শ, জো সং গিল যেন যুক্তরাষ্ট্রে বদলে থিতু হওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে বেছে নেন, যেমনটা তিনি করেছেন। কেন তিনি উত্তর কোরিয়ার পকশত্যাগ করা সাবেক সহকর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রের বদলে দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে বলছেন, তার কাড়ন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে থায়ে ইয়ং হো বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে যাওয়াটা দুই কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ উত্তর কোরীয় কূটনীতিকদের জন্য কোনও ‘পছন্দ অপছন্দের বিষয়’ নয়, বরং একটি কর্তব্য। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ায় পুনরেকত্রীকরণের ‘পাহারাদার।’

জো সং গিলের প্রতি তিনি লিখেছেন, ‘যদি আপনি দক্ষিণ কোরিয়ায় আসেন তাহলে আমাদের আরও অনেক সাবেক সহকর্মী দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে যোগ দেওয়ার বিষয়ে মনস্থির করতে পারবে। আর এর মাধ্যমেই পুনরেকত্রীকরণ কার্যকর হতে থাকবে।’ জো সং গিলের সঙ্গে থায়ে ইয়ং হোর দেখা হয়েছিল ২০০৮ সাল সালে, রোমে। সেখানে গিল তখন ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য ছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা উত্তর কোরিয়ার ৩২ হাজার পক্ষত্যাগী কর্মকর্তার কথা উল্লেখ করে থায়ে বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগী কর্মকর্তাদের জন্য ‘বেহেস্ত’ না হতে পারে, কিন্তু সেখানে গেলে স্বপন পূরণ হবে।

তার ভাষ্য, ‘উত্তর কোরীয় কূটনীতিক হিসেবে আপনার-আমার সারাজীবন ধরে পুনরেকত্রীকরণ সম্ভব করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটাই কর্তব্য, যাতে আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি দিয়ে যেতে পারি।’

উত্তর কোরিয়ার নীতি হচ্ছে, বিদেশে পদায়ন হওয়া কর্মকর্তাকে উত্তর কোরিয়াতে অন্তত একজন সন্তানকে রেখে যেত হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে আস্থাভাজন হিসেবে ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বা প্রভাবশালী যোগাযোগ আছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়। জো সং গিলের পরবারের সদস্যরা প্রভাবশালী সাবেক কূটনীতিক। সেই প্রভাব ব্যবহার করে তিনি তার সন্তানকে তার কর্মস্থলে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন।

থায়ে ইয়ং হো দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার পরামর্শ দিলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দক্ষিণ কোরিয়া নয়, উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগী কূটনীতিকদের জন্য ভালো ইউরোপ। কারণ সেখানে অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রবণতা আছে। ব্রাসেলসের একজন উত্তর কোরীয় বিশেষজ্ঞ র‍্যামন পাচেকো পারদো মন্তব্য করেছেন, ‘উত্তর কোরীয় কর্মকর্তাদের জন্য ইউরোপ অধিক মুক্ত ও নিরাপদ এলাকা। যুক্তরাজ্য ও ইতালির মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো সহজেই উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগী কর্মকর্তাদের শরণার্থী হওয়ার আবেদন অনুমোদন করে দেবে।’

সৌজন্যে- বাংলা ট্রিবিউন