বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একেবারে দোরগোড়ায়। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই দিনই নির্ধারিত হবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশের শাসন ক্ষমতায় কে আসছেন। তবে নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অনেকটা আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলছেন, ‘তার দল আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসছে।’
কলকাতার জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানান। বুধবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির সুধাসদনে একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্তমান নির্বাচন ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের উপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হব।’
এতটা নিশ্চিত কিভাবে হচ্ছেন? -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৩-র নির্বাচনে প্রায় ৬শ’ স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মুছে যায়নি প্রিসাইডিং অফিসারসহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, ভোটও দিয়েছিলেন। সেই জনগণ আবারও আমাদেরই ভোট দেবেন।
নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নালিশ করার পাশাপাশি বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং মিথ্যা কথা বলতে ওরা ভীষণ পারদর্শী। এছাড়া নির্বাচনে বিরোধীদের হয়ে যারা প্রার্থী হতে চেয়েছেন, তাদেরই ওরা নমিনেশন দিয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রতীক পেয়েছেন একজন। এরপর নিজেদের মধ্যেই সংঘাত শুরু হয়েছে। দলের পুরনো বা জিতবেন এমন নেতাদের নমিনেশন দেয়নি ওরা। যে কারণে বঞ্চিতদের কাছে ওদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে।’
দেশের যুব সম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খুবই উৎসাহী বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। বলেন, বাংলাদেশে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই মুছে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এর জেরে আওয়ামী লীগের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মতটাই পাল্টে গেছে।
নির্বাচনী সফরে মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছেন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সেই ভালোবাসাটা দেখতে পেলাম জানেন? তারা অন্তর থেকে চাইছেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানেন, আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আগের মতো অত চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরীতার পরিবেশও নেই। বরং আমাদের স্বপক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ্য করতাম। এবার কিন্তু একচেটিয়াভাবে সকলের সমর্থনটা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সেটা টেরও পাচ্ছি।’
পাকিস্তান প্রসঙ্গেও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তার দাবি, বাংলাদেশে কিছু পাকিস্তানপ্রেমী মানুষ আছেন। ‘যুদ্ধাপরাধীদের মন পড়ে আছে পাকিস্তানে’ -এমন মন্তব্য করার পাশাপাশি জানান, তারা (আওয়ামী লীগ) সতর্ক আছেন। কারও সঙ্গে বৈরীতা করতে না চাইলেও দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে কাউকে কোনোভাবেই নাক গলাতে দেবে না বাংলাদেশ।
লন্ডনে অবস্থানরত বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই সব আসামিরা সব সময় বিদেশে বসে দেশের ভেতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। অস্ত্রপাচার, চোরা কারবার এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ওই সব মানুষের অঢেল টাকা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাতে যারা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, সেই সব ব্যবসায়ীরাও ওই দলকে টাকাপয়সা দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতায় যখন ছিল তখন দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ না করলেও নিজেদের আখের ওরা (বিএনপি) গুছিয়ে নিয়েছে। ওই টাকা তো ওরা এখন ব্যয় করে দেশের ভেতরে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে।’ পাশাপাশি ব্রিটেনের সঙ্গে কথা বলে ওই সব আসামিদের দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকর করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিবন্ধন বাতিল করেছে তাদের কিভাবে নমিনেশন দেওয়া হয়? জামায়াত তো গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। নারীদেরকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া থেকে ঘরবাড়ি দখল করেছিল। ওদের নমিনেশন দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শঙ্কিত!’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা।
ড. কামাল হোসেনকে বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতা বলা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে চলে গিয়ে নিজে দল গঠন করেছেন। ধানমন্ডি থেকে একবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। শেখ হাসিনার কথায়, ‘সেই তিনি (ড. কামাল হোসেন) কিনা গেলেন জামায়াত-বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে! তবে আমি অবাক হইনি। কারণ কী জানেন? ওর শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে। ছেলেদের একটু শ্বশুরবাড়ির টানটা বেশি থাকে।’
সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে ভোটের ফল কেমন হবে? -এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, ‘ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম, আমরাই আসছি। কারণ, মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’’
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন।