মানুষের জন্য উপকারি ও পবিত্র সবধরনের খাদ্যের ব্যাপারে ইসলামের বিধান হচ্ছে হালার ও বৈধতার। আর যা কিছু হালাল তাই স্বাস্থ্যসম্মত। যে দেশে হারামের ছড়াছড়ি সেখানে হালাল খাবার পাওয়াটা খুবই দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু খেতে হবেই। আমাদের বাঁচার জন্য খাদ্য হলো মৌলিক চাহিদার ভেতরে প্রধান। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার মুসলমানরা যেসব সমস্যার মোকাবিলা করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হালাল খাবার। যার কারণ হচ্ছে এই দেশে মুসলমান সংখ্যা একেবারেই কম। তাই তাদের খাবারও ব্যতিক্রম।
যে কেউ দক্ষিণ কোরিয়াতে এসে খাবার নিয়ে দ্বিধা-সংকোচে পড়েন। আর সেটি হলো হালাল নাকি হারাম। কোরিয়া নামক দেশটির নাম শোনার পর আমাদের মেমোরিতে সাথে সাথে ক্লিক হয় এটিতো কুকুর এবং শূকর খাওয়ার দেশ। অনেকেরই কোরিয়ানদের কুকুর এবং শূকর খাওয়া নিয়ে কৌতুহল আছে, কোরিয়ানরা নাকি কুকুর খায়। হ্যাঁ কোরিয়ানরা কুকুরের মাংস খায়। কিন্তু এই কুকুরের মাংস খাওয়ার আগেপিছে অনেক কথা আছে। আর এইটুকুও সত্যি যে, এখন কোরিয়ানরা কুকুরের মাংস খাওয়া অনেকটা ছেড়ে দিয়েছে। তবে খুব কম রেস্তোরাঁয় কুকুরের মাংস পাওয়া যায়। তারা সবচেয়ে শূকরের মাাংস বেশি পছন্দ করে।
সম্প্রতি কোরিয়ার একটি আদালতে খাওয়ার জন্য কুকুর হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন। কুকুরের মাংস দক্ষিণ কোরিয়ার রন্ধনশৈলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বছরে প্রায় ১০ লাখের বেশি কুকুর খাওয়া হয় এখানে। তবে এখন কুকুরের মাংসের জনপ্রিয়তা কমে গেছে। কারণ, তরুণ প্রজন্ম কুকুরেকে খাদ্য হিসেবে দেখার চেয়ে মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে দেখতে বেশি পছন্দ করছে।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়াতে ১৭ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছে, তাদেও মধ্যে ১৫ হাজারই এসেছে সরকারি ইপিএস এর মাধ্যমে। বাংলাদেশের মানুষ যে শূকরের মাংস খায় না সেটা সব মালিক পক্ষই জানে তাই তারা কাউকে শুকরের মাংস খেতেও বলে না। তবে মালিকপক্ষের জন্য বড় সমস্যা হলো, কোম্পানির রেঁস্তোরাতে সবদেশের লোাকদের জন্য গরু বা মুরগীর মাংস খেতে দেয়া হয় এখানেও হালাল-হারামের প্রশ্ন থেকে যায়। ইসলামের বিধান ছাড়া জবাই করা কোন পশু বা পাখির গোশত খাওয়া মুসলমানদের জন্য হারাম। তাই গরু বা মুরগীর মাংস অনেকেই খায় না।
মুসলমানদের সবচেয়ে কষ্টদায়ক হচ্ছে কোরিয়ার খাবার নিয়ে। কাঁচা বাজার থেকে মাংস ছাড়া আর সবই কিনতে পারবেন। সমুদ্রের মাছ, শাক-সবজি সব একদম তাজা পাওয়া যায়। কিন্তু মুরগি, গরু, খাসি-এসব কেনার জন্য হালাল ফুড থেকেই নিতে হবে। এখন প্রায় সব সিটিতেই হালাল ফুডের দোকান পাওয়া যায়। দামও ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে।
দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ বৌদ্ধ ও ২০ শতাংশ খ্রিস্টান। প্রায় ২৫.৩ শতাংশ কোরিয়ান নাগরিক নির্দিষ্ট কোনো ধর্মই পালন করেন না। এদেশে মুসলমান সংখ্যা ৫০ হাজার সেই সঙ্গে কর্মজীবী মুসলিম রয়েছে বিদেশি ২ লাখেরও বেশি। কোরিয়াতে ১৮টি মসজিদ, ৫টি ইসলামিক সেন্টার ও ১৫০টি’র বেশি নামাজের স্থান রয়েছে। কিছু মসজিদে শনিবার রাতে সহীহ কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়। যার মাধ্যমে মুসলমানরা সহীহ শুদ্ধভাবে কোরআন পড়া শিখতে পারে।
তবে এদেশের সরকার মনেপ্রাণে চাইছে তাদের দেশটিতে আরো বেশি পরিমাণের মুসলিম ও ছাত্ররা আসুক। কোরিয়া ঘুরতে বা বিভিন্ন কাজে আসা মুসলমানদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। সম্প্রতি সেই লক্ষে কোরিয়ার রাষ্ট্রয়ত্ত্ব খাদ্য সংস্থা চালু করেছে একটি মোবাইল অ্যাপ। কোথায় কোন রেস্তোরাঁয় হালাল খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে তা জানতে পারবে। সেই সঙ্গে হালাল পণ্য পাওয়া যায় এমন বিপণীবিতানও সহজে খুঁজে বের করতে পারবে। শুধু তাই না, এই অ্যাপটির মাধ্যমে মুসলিম ক্রেতা জানতে পারবে তার ক্রয়কৃত পণ্য হালাল কিনা। আরো জানা যাবে, কোরিয়ায় মুসলমানদের দর্শনার্র্থীদের পছন্দের জায়গা কোনগুলো, কাবা শরীফ বা কেবলা নির্ণয় এবং কোথায় রয়েছে নামাজের ব্যবস্থা।
কোরিয়ানরা অনেক পরিশ্রম করে তাই খেতেও পারে অনেক। তারা স্বাস্থ্য সচেতন তাই সময়মত খাবার খেয়ে নেয়। কোরিয়ানরা দুপুরের খাবার খায় ১২টা-১টার মধ্যে। খুব কম সময় নিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করে তারা। কারণ কাজের ফাঁকে দুপুরের খাবার শেষ করে নিতে হয়। আর রাতের খাবার সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করার পর রাতের খাবারটা অনেক সময় নিয়ে গল্প করতে করতে খেতে পছন্দ করে তারা।
আগে ভাবতাম, কোরিয়ানরা চপস্টিক দিয়ে কীভাবে ভাত খায়? এদেশে আসার পর দেখলাম, ওদের ভাত অনেক আঠালো। ভাত একটার সাথে একটা লেগে থাকে তাই এক হাতে দুটো কাঠি ধরে ভাত খাওয়া সম্ভব হয়। কোরিয়ানদের পছন্দের খাবারের তালিকার মধ্যে আছে, বিবিম্বাপ, কিম্বাপ, বুকুম্বাপ, সি উইড স্যুপ, গেজাং, গালবি, কংগুক্সু, সামগ্যেতাং ও চিকেন ফ্রাই।
লেখক- মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে