শুভ জন্মদিন কোরিয়া! ৩রা অক্টোবর, ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ডে অব কোরিয়া; কোরিয়ার জন্মদিন। ইতিহাস বলে, খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩৩ সালের এই দিনে দাঙ্গুন ওয়াংগম কর্তৃক যে খোজোসন সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয় তাই বর্তমানে কোরিয়া নামে পরিচিত। খে-ছন–জল বা ‘স্বর্গের দুয়ার উন্মোচন দিবস’ হিসেবেও খ্যাত এ দিনটি কোরিয়াবাসী অদ্যবধি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।

chardike-ad

আজ দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারি ছুটি। পৃথিবীর প্রত্যেকটি জাতিরই রয়েছে উত্থানের গৌরবোজ্জ্বল অতীত, যা কখনও ইতিহাস কখনও কেবলই রূপকথা। কোরিয়ার জন্মলাভের কাহিনী ইতিহাস না রূপকথা সে বিতর্ক আবশ্যক নয়, তবে গল্পটা নিঃসন্দেহে মজার!

সে অনেককাল আগের কথা। হোয়ানিন নামে স্বর্গের এক রাজা ছিলেন। তাঁর পুত্র হোয়ানুং একদিন মনঃস্থির করলেন স্বর্গ ছেড়ে মর্ত্যে সাধারণ মানুষের সাথে বসবাস করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, পিতার অনুমতি নিয়ে হোয়ানুং ৩০০০ লোকবলসমেত বেকদু পাহাড়ে (বর্তমানে পাকতু বা ছাংবাই পাহাড় নামেও পরিচিত, উ. কোরিয়া ও চীনের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি) অবতরণ করলেন। সেখানকার স্থানীয় অধীবাসীদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন সিনসি বা ‘স্রষ্টার শহর’ নামের এক উপনিবেশ। কোন কোন বর্ণনা অনুসারে পাহাড় নয়, হোয়ানুংয়ের আবির্ভাব ঘটে উত্তর কোরিয়ার মিয়হ-ইয়ংসান নামক অঞ্চলের একটি চন্দন গাছের নীচে।

যাই হোক, রাজা হোয়ানুং রাজ্য পরিচালনার জন্য তাঁর মেঘ, বৃষ্টি ও বাতাসের মন্ত্রীদের সহায়তায় একটা সংবিধান তৈরি করলেন। সে সংবিধানের উপর ভিত্তি করে তৈরি হল আইন-কানুন, বিধিনিষেধ। রাজ্যের অধীবাসীদের কলা, চিকিৎসা ও কৃষি বিষয়ে শিক্ষাদান করা হল। পাশাপাশি সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ শিখিয়ে স্বর্গের রাজার উত্তরসূরি তাঁর প্রজাদেরকে ধীরে ধীরে ‘সভ্য’ করে তুললেন।

সব মিলিয়ে স্বর্গীয় রাজার মর্ত্যবাস ভালোই কাটছিল। এরই মাঝে একদিন একটি বাঘ ও একটি ভালুক রাজা হানুংয়ের কাছে ‘মানুষ’ হওয়ার অভিপ্রায় জানিয়ে প্রার্থনা করলো। রাজা তাদের ডাকে সাড়া দিলেন। তবে ইচ্ছাপূরণের আগে তাদেরকে একটি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হল। উভয়কে ১০০ দিনের জন্য সূর্যের আলোবিহীন একটি গুহা বন্দী করা হল। খাদ্য হিসেবে দেয়া হল কেবল ২০টি করে রসুনের কোয়া ও একটি করে মাগওয়ার্ট গাছের (আর্টেমিসিয়া প্রজাতির একটি আগাছাজাতীয় উদ্ভিদবিশেষ) শাখা। নির্ধারিত সময় এই অবস্থায় টিকে থাকতে পারলেই পূরণ হবে মানুষ হওয়ার স্বপ্ন। বেচারা বাঘ ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে অল্প ক’দিন বাদেই রণে ভঙ্গ দিয়ে খাঁচা ত্যাগ করলো। কিন্তু ভালুকটি কষ্টেসৃষ্টে দিনগুলো পার করে দিলো এবং ‘রমণী’ রূপে গুহা ছাড়লো।

ভালুক-কন্যা এবার রাজার কাছে সন্তান চেয়ে আবেদন করলেন। তাঁর এ আবেদনও গ্রাহ্য হল। রাজা স্বয়ং তাঁকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেন। যথাসময়ে রাণীর কোল আলো করে এলো মনুষ্য রাজপুত্র দাঙ্গুন ওয়াংগম। দাঙ্গুন বড় হলেন, খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩৩ সালের এই দিনে প্রথম ‘মানুষ’ হিসেবে কোরিয়ান উপদ্বীপের সিংহাসনে বসলেন। তাঁর রাজ্যের নতুন নাম দিলেন ছসং বা ‘তরতাজা সকাল’। নতুন রাজ্যের রাজধানী হল ওয়াংগম বর্তমান উ. কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং। পরবর্তীতে তিনি তাঁর রাজধানী আসাদাল নামক অঞ্চলে স্থানান্তর করেন এবং খ্রিস্টপূর্ব ১১২২ সাল পর্যন্ত কোরিয়া উপদ্বীপ শাসন করেন।

প্রতি বছর এই দিনে কাঘওয়া-দো অঞ্চলের মানি-সান পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ভাস্কর্যের সামনে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রচলিত আছে, এই ভাস্কর্যটি দানগুণ তাঁর স্বর্গীয় পিতা ও পিতামহের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেছিলেন।

যদিও এসব গল্প এখন আর কেউ বিশ্বাস করতে চায় না, তথাপি দাঙ্গুনের রূপকথা কোরিয়ান জাতীয়তাবাদকে আজও প্রেরণা যুগিয়ে চলেছে সন্দেহাতীতভাবেই। বেঁচে থাকুক কোরিয়ান জাতীয়তাবাদ, চিরজীবী হোক কোরিয়া। শুভ জন্মদিন!

মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ, ২০১৪ সালের ৩ অক্টোবর প্রথম প্রকাশিত।