নানা বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে বিদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব গ্রুপ অব কোম্পানি। এক যুগ আগের সেই তরুণী এখন অনেক নারী উদ্যোক্তার কাছেই দৃষ্টান্ত। নিজের ব্যবসায় আমিরাত জয় করেছে এই বাংলাদেশি নারী শেফালি আক্তার আঁখি।
আমিরাতে তার মালিকানাধীন মাহবুব গ্রুপ অব কোম্পানির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক। শুধু বাংলাদেশি নয় এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের শ্রমিকও। এই নারী উদ্যোক্তার সাফল্য এখন আমিরাতে মডেল হিসেবে অনুপ্রাণিত করছে তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের।
২০০৩ সালের মে মাসে শারজাহ ফ্রি জোনের ভিসা নিয়ে প্রথম পা রাখেন আমিরাতে। এর আগে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় একটি বায়িং হাউসে বছরখানেক চাকরি করেন শেফালী। সেখান থেকেই কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
সেখানে কাজ করেন এম এম ইন্টারন্যাশনালে। এমএম ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাজহারুল ইসলাম মাহবুবের সঙ্গে বিয়ে হয় শেফালির। বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দেন। ততদিনে একটু একটু করে নিজেকে তৈরি করেন। গাড়ি চালানো, হাতের কাজ এসব বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন।
আর এভাবে নিজেকে তৈরি করেন। কিছু করার যে পরিকল্পনা ছিল, সে কাজটাই শুরু করেন বিদেশের মাটিতে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্বামী মাজহারুল ইসলাম মাহবুবের সহযোগিতায় করেন পোশাক প্রস্তুতকারকের এর ব্যবসা। শুরুটা ভালো ছিল না। কারণ দেশের বাইরে একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে নানা ধরনের অসুবিধার কথাও বলেন এই সফল নারী।
কিভাবে সম্ভব হলো সফলতার এই পর্যায়ে আসতে জানতে চাইলে, শেফালী জানান, আমি এক মুহূর্তের জন্য দমে যাইনি। নিজেকে কখনো নারী হিসেবে ভাবিনি। আমার ভাবতে ভালো লাগে আমি একজন মানুষ। আর মানুষ হিসেবে যখন জন্ম হয়েছে তাই কিছু একটা করতে হবে। আর সেটা যদি মানুষের কল্যাণ হয় তাহলে আমার ভালো লাগবে। আসলে এভাবেই শুরু করি।
কোম্পানিটিরি ম্যানেজিং পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আঁখি। তার মালিকানাধীন গ্রুপ অব কোম্পানির অধীনে রয়েছে ওরিয়েন্ট গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, আল বোরাক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, কামিল টেইলারিং অ্যান্ড এমব্রয়ডারি এলএলসি ও জাহারাত আল বুসতান মেইন্ট অ্যান্ড ক্লিনিং উল্লেখ করার মতো।
ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ইতোমধ্যে আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেকবার বিশেষ সম্মাননা পুরস্কারও লাভ করেন এই নারী উদ্যোক্তা। দেশের মাটিতেও বিভিন্ন সংগঠন তাকে সফল নারী উদ্যেক্তা হিসেবে সম্মাননা প্রদান করে।
পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ ও সফল সংগঠকও। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুদের নিয়েও কাজ করছেন দীর্ঘদিন। শেফালী আশা করেন আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে বড় পরিশরে কাজ শুরু করবেন।
এই সফলতার পেছনের গল্প জানতে চাইলে শেফালী বলেন, ‘প্রথম যখন আমিরাতে এসেছি, তখন অনেকেই মন্তব্য করেছে। আমি একবারের জন্যও দমে যাইনি। বলতে পারেন সবার অমতেই বিদেশে আসি। শুধু নিজের আত্মশক্তির ওপর নির্ভর করেই বিদেশে যাই। আমার নিজেকে প্রমাণ করার প্রয়োজন ছিল, বলতে পারেন সে জন্যই একটু হলেও সফল হতে পেরেছি। সবকিছু সম্ভব হয়েছে হয়েছে স্বামী মাহবুবের সহযোগিতায়। তাই এই সফলতায় তার অবদান অনেক বেশি।’ তবে এতটুকুতেই তুষ্ট হতে চান না এই উদ্যোমী নারী, যেতে চান আরও বহুদূর।