জয় পরাজয়টা যেন তুচ্ছ হয়ে গেল। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠার মতো ব্যাপার! যাকে মিনিটখানেক আগেও দেখা গেল ভাঙা হাতে ব্যান্ডেজে, গলার সঙ্গে হাতটা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার; সেই তামিম ইকবাল একটু পর হাজির বাইশ গজে।
কিভাবে এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে গেলেন তামিম? এ কি মিরাকল! না, মিরাকল ঘটেনি। তামিম সুস্থও হননি। এশিয়া কাপের বাকি ম্যাচগুলো হয়তো খেলা হবে না এই ওপেনারের। সেই তিনিই মাঠে নামলেন, দলের প্রয়োজনে।
দেখে দর্শকদেরও কষ্ট লাগছিল। খেলার প্রতি এত আবেগ, দেশের জন্য এত প্রেম! এক হাতেই ব্যাটিং করতে নেমে গেলেন তামিম? মুশফিকের অবিশ্বাস্য ইনিংসটা ছাপিয়ে যেন সব আলো বাঁ-হাতি এই ওপেনারের উপর। তিনি কি করে পারলেন, এমন কঠিন আর সাহসী একটি সিদ্ধান্ত নিতে?
বলতে যত সহজ। কাজটা কিন্তু তত সহজ ছিল না। ভাঙা হাতে যদি আবারও বল লাগতো, তবে হয়তো ক্যারিয়ারটা নিয়েই নতুন করে ভাবতে হতো তামিমকে। তবু তিনি ঝুঁকিটা নিলেন। দলের প্রতি, দেশের প্রতি, সমর্থকদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে।
তামিমের এই সাহসিকতায় শেষ উইকেটে আরও ৩২টি রান যোগ করল বাংলাদেশ। মাত্র ১৬ বলে। পুরো রানটাই যদিও এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে। কিন্তু তামিম যদি ওমন সাহসিকতার পরিচয় না দিতেন, মুশফিক তো এই সুযোগটাই পেতেন না!
শেষপর্যন্ত মুশফিকুর রহীম তামিমকে সঙ্গে নিয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করলেন, খেললেন ক্যারিয়ারসেরা ১৪৪ রানের ইনিংস। ১৫০ বলের যে ইনিংসটি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান সাজিয়েছিলেন ১১ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায়! এর চেয়ে বড় ইনিংস হয়তো অনেকেই খেলেছেন বিশ্বক্রিকেটে। তবে একটা প্রান্ত আগলে রেখে এভাবে এগিয়ে চলা; অবিশ্বাস্য. আসলেই অবিশ্বাস্য!
তার চেয়েও যেন অবিশ্বাস্য ছিল তামিমের মাঠে নেমে পড়া। তামিম যদি নামতে না পারতেন, বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যেত ২২৯ রানেই। এখন স্কোরবোর্ডে রান ২৬১। ওয়ানডে ক্রিকেটে যেই পুঁজিকে লড়াকুই বলা যায়।
তামিম দেখালেন, ক্রিকেটটা শুধু একটা খেলা নয়, বাংলাদেশিদের আবেগের জায়গা। আর যুদ্ধের ময়দানে সামনে থেকে লড়ে যাওয়ার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মুশফিক। সাবাস বাংলাদেশ, সাবাস তামিম, সাবাস মুশফিক। এই আবেগটাই তো শত কষ্টের মাঝেও ১৬ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটায়। তোমরা হাসলে, হাসে বাংলাদেশ!