Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

abod৭২ বছর বয়সেও পিতার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের সীমান্ত লাগোয়া ইটিন্ডা গ্রামের বাসিন্দা অবোদ দফাদার। গ্রামের স্কুলে প্রথম শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিতে যাওয়ার দিন বাবা বলেছিলেন, ‘‌স্কুলে ছাত্র পড়াতে যাচ্ছ। সরকার বেতন দেবে। জীবনে কোনও দিন টাকা নিয়ে প্রাইভেট পড়াবে না।’

অবোধ দফাদার ৭২ বছরে পা দেবেন অক্টোবরে। এখনও তিনি সেই আদেশ আজো পালন করে যাচ্ছেন। অবোধ দফাদার প্রতিদিন ব্যাটারিচালিত স্কুটি চেপে ইটিন্ডা গ্রাম থেকে রঘুনাথপুর, কাঁকড়া গ্রামে ছোটেন সাহিত্য পড়াতে। একবার পড়াতে বসে গেলে আর ওঠেন না। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছেলেমেয়েদের বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য পড়াতে পাঠের গভীরে ডুবে যান তিনি। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীও আছে অবোধ দফাদারের।

chardike-ad

sentbe-adধুতি–পাঞ্জাবি পড়ে সকাল হতেই একটা স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ফেরেন পড়ানো শেষ করে। বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে চলতে চলতে এলাকার ছেলেমেয়েদের পাঠের ওপর আলোকপাত করেন। তাঁর আরেকটা পরিচয় আছে সকলের কাছে। —‘‌লজেন্স দাদু’‌। তিনি যখনই পথে বেরোবেন, তাঁর সঙ্গে থাকে লজেন্স। যার সঙ্গেই দেখা হোক, পাঞ্জাবির পকেট থেকে লজেন্স বের করে তার হাতে দিয়ে কুশল বিনিময় করে নেন। এভাবেই তিনি সকলের কাছে ‘‌লজেন্স দাদু’‌ হয়ে গেছেন।

একদিন ইটিন্ডার বাড়িতে বসে অবোধ দফাদার বললেন, ‘‌আমার বাবা কানাইলাল দফাদার ছিলেন একেবারে দরিদ্র। অন্যের আশ্রয়ে তিনি কাটিয়েছেন। কৃষিকাজ করে আমাদের মানুষ করেছেন।’‌ তিনি বলেন, ‘‌১৯৬৭ সালে ৪ ডিসেম্বর পানিতর হাইস্কুলে যেদিন চাকরিতে যোগ দিই, সেদিন বাবা বলেছিলেন, কোনও দিন যেন প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা না নিই। আমি বাবার সেই কথা রাখতে আজও পড়িয়ে যাই।’‌ ছাত্রছাত্রীদের নাম কিংবা ফোন নম্বর তিনি মনে রাখেন না। তবে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, বিজন ভট্টাচার্য প্রমুখের গদ্য দু’‌চার পাতা মুখস্থ বলে যান অনায়াসে। ২০০৭–এ স্কুল থেকে অবসর নিয়ে আজও পড়াতে তাঁর ক্লান্তি নেই।