আপনি যদি জানতে পারেন আপনি মাত্র আর সাত মাস বাঁচবেন, তখন আপনি কি করবেন? আপনার পূরণ না হওয়া ইচ্ছেগুলো নিশ্চয় পূরণ করতে চাইবেন, ঘুরতে যাওয়া, সুন্দর সুন্দর জায়গা ভ্রমণ, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো এবং যে কাজগুলো করার সময় পাননি সেগুলো করা। কিন্তু এই ব্যাক্তি যা করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ডাক্তাররা তাকে ৭ মাসের সময় দেন। তিনি এই সাত মাস দাতব্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন এবং সব অর্থই দান করে দেন। এই মহান ব্যাক্তির নাম আলি বানাত। এই মহৎ ব্যাক্তিকে নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।
দুঃখজনক ভাবে আলি বানাত আর আমাদের সাথে নেই, তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাসিন্দা ছিলেন। এই কোটিপতি খুব অল্প বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। ২০১৫ সালে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং ডাক্তাররা বলেন তিনি আর আনুমানিক সাত মাস বেঁচে থাকবেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, আলি বানাত তার ডেডলাইনের পর আরও ২ বছর বেঁচে ছিলেন। এই সময়গুলোতে তিনি তার সম্পূর্ণ সময় দাতব্যের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে দিয়েছিলেন এবং মৃত্যুর আগে সব অর্থ দান করে যান।
নিচের ক্যাপশনটি দিয়ে তিনি ইন্সট্রাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন।
“আমরা প্রত্যেকেই জীবনে একটি সুযোগ পাই এবং আল্লাহ যখন ঠিক করেন তার কাছে আমাদের দিয়ে যাবেন সেখান থেকে ফেরার আর কোন উপায় থাকে না। আমরা আমাদের জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় ঘুম এবং বাথরুমে কাটাই এবং বাকি অর্ধেক কাজ এবং রাস্তায় কাটাই। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা গাছ লাগানো কিংবা একটা কুরআন দান করা কিছুই করি না। হাসিমুখে আল্লাহর নামে আমাদের দান করা উচিৎ। কেয়ামতের দিন আমরা যখন আল্লাহর মুখোমুখি হব, আমরা তখন বলতে পারব আমরা মানুষের সাহায্য করেছি, সময়গুলো শুধুই নষ্ট করিনি। আমরা মানুষের দুঃখে চুপ ছিলান না, আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছি। সারা পৃথিবীর মুসলিমদের দুঃখে আমরা চুপ ছিলাম না, আল্লাহর নামে তাদের জন্য কাজ করেছি। তাদের খারাপ সময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। -সালাম”।
আলি বানাতের জীবন আগে এমন ছিল না। ক্যন্সার ধরা পড়ার আগে কোটিপতি হিসেবে তিনি বেশ বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। গতিবহুল গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি, পার্টি করা, আনন্দের জন্য যা যা করার দরকার সবই করেছেন। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর তিনি সম্পুর্ণ বদলে যান। তার হৃদয় পরিবর্তিত হয়।
ডাক্তাররা তার বেঁচে থাকার সময় ঠিক করে দিলে তিনি আফ্রিকার দেশ টোগো ভ্রমণ করেন। এখানে জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে তিনি তাদের সাহায্য করেন। তিনি এইও প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেবেন।
তিনি সুবিধাবঞ্চিত মুসলিমদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করেন এবং সেখানে পড়ালেখার ব্যবস্থা করেন। এরপর তিনি Muslim Around The World [MATW] নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। এর মাধ্যমে তিনি দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মুসলিমদের সাহায্য করেছিলেন।
একটি সাক্ষাতকারে আলি বানাত বলেন, “একটি ব্যক্তিগত প্রকল্প হিসাবে শুরু করা প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বের শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে এটি কাজ করবে।
Muslim Around The World [MATW] এর লক্ষ্য ২০০ জন বিধবা মহিলাদের জন্য একটা গ্রাম তৈরি করবে, স্থানীয়দের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করবে এবং ৬০০ এতিম শিশুদের জন্য বিদ্যালয় তৈরি করবে। একটি ছোট হাসপাতাল বা স্থানীয় ক্লিনিক এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করবে যাতে স্থানীয় লোকেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়”।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি আমার গাড়ি ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছি, ঘড়ি ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছি এমনকি আমার কাপড়ও। আমি বিদেশে যাওয়ার সময় সেগুলো নিয়ে গিয়েছি এবং সেখানকার অনেক লোকেদের দিয়ে দিয়েছি। আমি কিছু ছাড়াই এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাই”।
দুঃখজনকভাবে, এই ধনকুবের ২০১৮ সালের ২৯ মে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। দাতব্যের কারণে অর্থ সংগ্রহের তার যে স্বপ্ন সেটা অন্তত তিনি সফল হতে দেখেছেন। তিনি দাতব্যের জন্য ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১১ কোটির সমান সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগে সব দান করে যেতে পেরেছিলেন।
এই পৃথিবীতে কেউ নশ্বর নন, স্বল্প সময়ের এই জীবনে মানুষের জন্য যতটুকু করা যায় আমাদের সবার তা করা উচিৎ। আলি বানাতের এই গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় আমরা যদি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই, কোন কিছুই অসম্ভব নয়। মানুষের কল্যাণে যে জীবন বিলিয়ে দেয় কেয়ামতের দিন তিনি বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন, আমি মানুষের ভালো করেছি, আমার আর কোন ভয় নেই।
সৌজন্যে- ফাপরবাজ