Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

pak-usপ্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতার ইনিংস শুরু না হতেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো বড় এক ধাক্কা। ক্ষমতায় এসেছেন এক মাসও পেরোয়নি, এরই মধ্যে রোষের মুখে পড়ল তার দেশ পাকিস্তান। অভিযোগ একটাই- সেই ‘পুরনো ভূত’ পাকিস্তানের কাঁধ ছাড়ছে না। জঙ্গি দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে দেশটি। এর জেরেই পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ৩০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা বাতিল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের এই সিদ্ধান্তে নিশ্চিতভাবেই বিপাকে পড়বে ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তান’। খবর বিবিসির।

গত শনিবার পেন্টাগনের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল কোনে ফকনার এক বিবৃতিতে বলেন, বাতিল হওয়া এ অর্থের ছাড় আগে স্থগিত রাখা হয়েছিল। এখন পাকিস্তানকে দেওয়ার বদলে ওই অর্থ সামরিক বাহিনী তাদের ‘জরুরি অগ্রাধিকার’ বিভিন্ন প্রকল্পে খরচের পরিকল্পনা নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ সামরিক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সব জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখব আমরা।’ তবে গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন ঘোষণা দিলেও অর্থসহায়তা বাতিলের এ সিদ্ধান্তটি মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদিত হতে হবে।

chardike-ad

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর পাকিস্তান সফরের দিনকয়েক আগে পেন্টাগন ইসলামাবাদকে দেওয়া অর্থসহায়তা বাতিলের এ ঘোষণা দিল। পাকিস্তান সফরে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে পম্পেওর দেখা হওয়ার কথা রয়েছে।

জঙ্গি দমনে পাকিস্তানের ব্যর্থতা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আগে থেকেই বেশ খÿহস্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি টুইট করে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানকে বোকার মতো গত ১৫ বছরে ৩৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের নেতাদের বোকা বানিয়ে দিনের পর দিন ঠকিয়েছে পাকিস্তান। আমরা যেসব জঙ্গিকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি, তাদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে পাকিস্তন।’ সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার হুমকি দিয়েছিল, পাকিস্তানে সব ধরনের নিরাপত্তা সহায়তা তহবিল কাটছাঁট করা হবে। তারা যে সেদিকেই এগোচ্ছে নতুন এই ঘোষণা তারই ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মাটিতে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করতেই পাকিস্তান বাহিনীকে আর্থিক ও সামরিক সাহায্য দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক ও সামরিক সাহায্য দেওয়া সত্ত্বেও কিছুই করছে না ইসলামাবাদ। বলা হচ্ছে, কাজে লাগছে না যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য, আর দক্ষিণ এশিয়ায় ধাক্কা খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। এই নিয়েই তিতিবিরক্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন শেষমেশ ৩০ কোটি ডলারের আর্থিক অনুদান অন্য খাতে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করতে বাধ্য হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, উল্টো আদর্শগত কারণে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে প্রচ্ছন্ন মদদ দেয় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তানের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা এই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নিয়ে ভারতের উদ্বেগও দীর্ঘদিনের। বলা হয়ে থাকে, এর ফলে পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে জঙ্গিরা আফগানিস্তানে প্রবেশের সুযোগ পায় ও জঙ্গি হামলা চালানোর অবাধ সুযোগ পায়।

তবে পাকিস্তান সবসময়ই এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তাদের দাবি, তারা বরাবর জঙ্গি দমনে কঠোর। পাকিস্তান এক্ষেত্রে যতটা করেছে, অন্য কোনো দেশ তা করেনি। অবশ্য পাকিস্তানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হতাশা নতুন কিছু নয়। পাকিস্তানের মাটিতে গজিয়ে ওঠা জঙ্গি ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ড্রোন হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

চাপ আসছিল বিভিন্ন মহল থেকেই। ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য রাখছিলেন ইমরান। তার জেরেই সম্ভবত আর কঠোর বার্তা নয়, আর্থিকভাবে পাকিস্তানকে চাপে রাখার পথে হাঁটল যুক্তরাষ্ট্র।