দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের দুইদিনব্যাপী ১৫তম মিলনমেলা। সমুদ্র এবং পাহাড়ের জন্য বিখ্যাত খাংউওন প্রদেশে এই মিলনমেলায় অংশ নিয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। কোরিয়ার সবচেয়ে সুন্দর পর্বত বলে খ্যাত সরাক মাউন্টেইন এবং সোকছো’র বোংপো সীবিচে অসাধারণ দুইদিন কাটিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা। মিলনমেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পোস্ট ডক্টরেল ফেলো এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ যোগ দেন। গত শনিবার এবং রবিবার সরাক ইয়ুথ হোস্টেলে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া (বিএসএকে) এই আয়োজন করে।
মিলনমেলার প্রথমদিনে আবু জাফর মুনসুরের উপস্থাপনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসএকের ইটিআরটি সদস্য শামীমুল ইসলাম। এরপরই নবীন এবং ডিগ্রীপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের হাতে ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট তুলে দেন মিলনমেলার প্রধান অতিথি দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। নবীনদের পক্ষে নাসিম আল ইসলাম এবং ডিগ্রীপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন খাদিজা হাবিব। বিদায়ী ইটিআরটি সদস্যদের পক্ষে স্মৃতিচারণ করেন আশিকুর রহমান। বাংলাদেশী গবেষকদের পক্ষ থেকে বিএসএকে নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন ডঃ মামুন। অনুষ্ঠানে বিএসএকে’র পক্ষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন কোরিয়া ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক মনিরুজ্জামান মনির।
মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিউলস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বিএসএকে’র কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আগামী সেপ্টেম্বর অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের সাথে মতবিনিময়ের আহবান জানান। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রফেসরদের দূতাবাসের আমন্ত্রণের পরিকল্পনার কথা জানান। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সাংস্কৃতিক পর্বের আয়োজনে এবারের সেরা আকর্ষণ ছিল বিএসএকে ঢাকঢোলের পরিচালনায় মঞ্চ নাটক ‘কুসুম কুসুম প্রেম’। কোরিয়াতে পড়াশোনা করতে আসা ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনাগুলো নিয়ে মঞ্চ নাটকটি সাজানো হয়। গান, নাচ, কৌতুক স্থান পায় কুসুম কুসুম প্রেমে। অনুষ্ঠানটির প্রশংসা ছিলো সবার মুখে মুখে। এবারের অনুষ্ঠানে নতুন কিছু উপহার দিতেই ‘কুসুম কুসুম প্রেম’ এর পরিকল্পনা করা হয় বলে জানান বিএসএকের উপদেষ্ঠা ডঃ আশরাফ হোসেন রাসেল। কুসুম কুসুম প্রেমের মূল ভাবনায় ডঃ আশরাফের সাথে ছিলেন সুস্মিতা দাশ নিশু।
মিলনমেলার দ্বিতীয় দিনে শুরুতেই শিক্ষার্থীরা সরাক পর্বতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। জেজু দ্বীপের হাল্লা পর্বত এবং জিরিসানের পরে দক্ষিণ কোরিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত সরাকসান। এই পর্বতের উচ্চতা ১৭০৮ মিটার। খিয়ংদোং ইউনিভার্সিটিতে ফুটবল খেলা এবং সোকছো’র বোংপো সীবিচ উপভোগের মাধ্যমে দ্বিতীয় দিনের ট্যুর শেষ হয়।
মিলনমেলায় অংশ নেওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মত। ব্যস্তময় প্রবাস জীবনে শত বাংলাদেশীকে একসাথে পাওয়া যেন সোনার হরিণ। যদি তাতে যোগ হয় একসাথে হাসি আড্ডা, গান, ভোজনবিলাস তাহলেতো কথায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, গবেষণার ব্যস্ততার মাঝে প্রতি সেমিস্টারে একবার দুই দিনের জন্য বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় করে বাংলাদেশি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া (বিএসএকে)। নানা আয়োজনের পাশাপাশি কোরিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের পরিচয় হওয়ার অসাধারণ একটা সুযোগ এই মিলনমেলা।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পারষ্পরিক সাহায্য সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন (বিএসএকে) গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফেসবুক এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে আসছে সংগঠনটি। এছাড়া প্রতিবছর দুই সেমিস্টারে দুইবার মিলনমেলারও আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি।