জীবিকার তাগিদে দেশান্তর প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি। পরিবারের জন্য একটু সুখ আর মুখভরা হাসি ফোটাতে নিজের সুখকে জলাঞ্জলি দিয়ে সুখ কিনতে বিদেশে পাড়ি জমান প্রবাসীরা। কেউ সুখী হয় কেউ আবার দুঃখে ভরা জীবন পার করে। কেউবা সুখে থাকার অভিনয় করে।
চাইলেই সুখ মিলবে এমনটা কিন্তু নয়। তবু জীবনের সঙ্গে অবিরত যুদ্ধ চালায় ভাগ্য উন্নয়নের জন্য রেমিটেন্স যোদ্ধারা। লক্ষ্য থাকে সবাই মিলেমিশে সুখে থাকবে। দিন-রাত পরিশ্রম করে মাস শেষে যা বেতন পায় সবই দেশে পাঠিয়ে দেয়। নিজের কথা নিজের ভবিষ্যতের কথা একবারও ভাবার সময় হয় না।
বছরের পর বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে প্রবাসীরা। দেশের প্রতি রয়েছে অসীম মমতা আর বুকভরা ভালোবাসা। সেজন্যই দেশে টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখে। একটাই দুঃখ জীবন-যৌবন বিলিয়ে দেয় প্রবাসে অবশেষ দেখা যায় শূন্য হাত। এতদিন যে পরিমাণ টাকা পাঠিয়েছে নিজের জন্য অবশিষ্ট কিছুই রাখা হয়নি। এমন অসংখ্য প্রবাসী আজ দুঃখ দুর্দশার জীবন অতিবাহিত করছে। কিছুই যেন করার নেই।
ইচ্ছে করলেই এখন আর আগের যৌবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। পরিবারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে হরহামেশা মানসিক বিপর্যয় নিয়ে থাকতে হয়। অতিরিক্ত মানসিক চিন্তার ফলে অকালে প্রাণ ঝরে যাওয়ার অসংখ্য ঘটনা আছে।
অথচ দেশে থেকে পরিবারের লোকজন মনে করে তারা কতই না সুখে আছে।। সুখের সীমা নেই। কিন্তু সে-ই জানে কতটা সুখে আছে। দেশে পরিবার-পরিজন তাকিয়ে থাকে বিদেশ থেকে কবে টাকা পাঠাবে। আর একের পর এক আবেদন আসতেই থাকে। আজ এটা লাগবে কাল ওটা লাগবে। এটা নেই, ওটা নেই। নেই আর নেই বার মাস এ রকম শুনতে শুনতে এক প্রকার হতাশায় পড়ে প্রবাসীরা।
এ হতাশা থেকেই হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান অনেক প্রবাসী। আয়ের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় হতাশাগ্রস্তের ফলে অকালে ঝরে পড়ে অসংখ্য জীবন। যেসব পরিবার প্রবাসীর আয়ের ওপর সংসার চলে তাদের আর দুঃখের সীমা থাকে না। মৃত্যুর পরে অনেক পরিবারের শুভ বুদ্ধি উদয় হয়। কেন তাকে বার বার টাকার জন্য চাঁপ সৃষ্টি করা হলো। প্রবাসে একটি প্রাণ ঝরে গেলে তাদের কথা মতো ডিম পাড়া একটি মুরগি কমে যায়। তাতে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব পড়ে কি-না বছরের হিসেব টানতে গেলে তা বোঝা যায়।
প্রবাস কোনো আরাম-আয়েশের জায়গা নয়। মন চাইলে বসে বসে খাওয়া যায়। এখানে প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিটের হিসেব কড়ায়-গণ্ডায় কষতে হয়। তা না হলে মাস শেষে টাকার হিসেব মেলানো কষ্ট হয়ে যায়। নিয়মের বাহিরে একদম চলাফেরা করা যায় না। সময়ের রেষ ধরে এগিয়ে যেতে হয় সব বাঁধা অতিক্রম করে।
টগবগে যুবক হয়ে পাড়ি জমায় বিদেশ। এরপর শেষ ঠিকানা সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে। এর মাঝে জীবনের অনেক চাওয়া-পাওয়া রেখেই চলে যেতে হয় অচেনা-অজানা দেশে। থাকতে হবে সেখানে অনন্তকাল। এই চিরন্তন কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে প্রবাস জীবন পার করতে হয় এক একজন রেমিটেন্স যোদ্ধাকে। ভাগ্যের চাকা সচল রাখতে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে প্রতিটি প্রবাসীকে। ভাগ্যের কাছে কেউ আবার পরাজয় বরণ করে জীবন যাত্রার হিসেব উপযুক্তভাবে কষতেও পারে না। আর এই ভুলের মাশুল দিতে হয় যতদিন দেহে থাকে প্রাণ।
লেখক: জমির হোসেন, ইতালি থেকে