আজ বাদে কাল বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা উঠবে। রাশিয়ায় ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ শুরুর মাত্র দুই দিন আগে সিঙ্গাপুরে হয়ে গেল আরেক মহা ‘শো’।
মঙ্গলবার পুরো বিশ্বেরই নজর ছিল সিঙ্গাপুরে। দেশটির সেন্তোসা দ্বীপে কূটনীতির ‘হাইভোল্টেজ ম্যাচ’ নিয়ে সবার মাঝে ছিল ব্যাপক আগ্রহ। কারণ, এই খেলায় মুখোমুখি হয়েছিলেন বিশ্বের দুই খ্যাপাটে খেলোয়াড়। একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন।
খেলায় কে জিতলেন—ট্রাম্প, নাকি কিম?
ফলাফল বিচার তো অনেক পরের কথা। বিসিসি বলছে, ট্রাম্পের সঙ্গে কিমের মতো একনায়কের বৈঠককেই উত্তর কোরীয় নেতার জন্য একটা বিজয় হিসেবে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক।
নানা নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে বিলাসবহুল ক্যাপেলা হোটেলে ঐতিহাসিক বৈঠকের আগে-পরে ট্রাম্প ও কিমকে বেশ হাস্যোজ্জ্বলই দেখা গেল। তাঁদের হাসি হাসি মুখ দেখে সাধারণের বোঝার উপায় নেই—বৈঠকে কে জয়ী আর কে বিজিত! এই যখন অবস্থা, তখন ‘মুখরা’ ট্রাম্প যথারীতি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কালবিলম্ব না করে নিজের ‘সাফল্যের’ ঢোল নিজেই পেটালেন। কিমের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যৌথ চুক্তিকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। তবে এই চুক্তির সারবস্তুতে ঘাটতি রয়েছে বলে ইতিমধ্যে মত দিয়েছেন পর্যবেক্ষকেরা।
সই হওয়া চুক্তিতে কিম পুরোপুরি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু এই নিরস্ত্রীকরণ কীভাবে সম্পন্ন হবে, তার উল্লেখ চুক্তিতে নেই। তা ছাড়া কিম যে তাঁর অঙ্গীকার রাখবেন, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যায় না।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসানের আশ্বাস দেন। তিনি জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া স্থগিত করবেন। ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে বড় ধরনের ছাড় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করারও আশ্বাস দিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়াকে ‘উসকানিমূলক’ বলে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে উত্তর কোরিয়া। সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প তা প্রকাশ্যে কবুল করে নিলেন। তাঁর স্বীকারোক্তি নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রকে খাটো করেছে। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া করার ভিত্তিও হারাল।
ডেমোক্র্যাট শিবিরে ইতিমধ্যে ট্রাম্পের সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। তারা বলছে, ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলে গলা ফাটিয়ে আসছেন। এখন তার নমুনা দেখা যাচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম রাষ্ট্রকে বুকে টেনে নিয়েছেন। কিম যে চরম স্বৈরাচারী এক শাসক, এ কথা কার না জানা! অথচ তাঁরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প। কিমের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে ট্রাম্প অনেক ছাড় দিয়েছেন। তিনি উত্তর কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের সমপর্যায়ে তুলে এনেছেন।
উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। কিন্তু ট্রাম্প-কিম বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আলোচিতই হয়নি। এই ব্যর্থতা ট্রাম্পেরই।
সবশেষ বলতে হয়, সিঙ্গাপুর বৈঠকে ট্রাম্প নয়, বরং সবার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন কিম। এই বৈঠক তাঁকে ‘হিরো’ বানিয়েছে। বৈঠকের ডামাডোলে ঢাকা পড়ে গেছে তাঁর স্বৈরচারী রূপ।