আফগানিস্তানের বিপক্ষে এ সিরিজ শুরুর আগে টি-টোয়েন্টিতে জয়-পরাজয় সমান ছিল, একটি করে। দিনকে দিন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা আফগানদের জন্য একটি বার্তা পৌঁছানোর দরকার ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ক্রিকেটের ছোট্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশ থেকেও তাদের শারীরিক ভাষা, মাঠে ব্যাটে-বলে লড়াই করার মানসিকতাটা একটু বেশিই বৈকি। আর যেখানে রশিদ খানের মত বর্তমান সময়ের বিশ্বসেরা স্পিনার, মুজিব-উর রহমানের মত তরুণ উদীয়মান বোলার রয়েছে সেখানে মোস্তাফিজহীন বাংলাদেশ ছন্নছাড়া হবে এটা ক্রিকেট বোদ্ধারাও বেশ ভালোভাবেই জানতেন। দেরাদুন স্টেডিয়ামে তাই হলো। বাংলাদেশকে ৪৫ রানের বড় ব্যবধানে হারালো যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে ৪৫ রানের পরাজয় ‘বড়’ ব্যবধানই বৈকি।
প্রস্তুতি ম্যাচের মতই গা ছাড়া ভাবটা বেশ লক্ষণীয় ছিল বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মাঝে। আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে হেরে মূল সিরিজে ভালো করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু ব্যাটে বলে সেটার ছিটেফোটাও দেখা যায়নি রোববার রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে।
সিরিজের প্রথম ম্যাচের পুরোটা জুড়েই ছিল আফগান বোলারদের দাপট। মূলত তাদের কাছে নাকাল হয়েছে পুরো বাংলাদেশ ব্যাটিং লাইন-আপ। বিশ্ব একাদশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলে এই ম্যাচেই ফেরেন তামিম। কিন্তু ১৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই শূন্য রানে ফেরেন তিনি। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে আইপিএল মাতান মুজিব-উর-রহমান আফগানদের এনে দেন প্রথম ব্রেক থ্রু।
সেই যে শুরু, আর থামাথামি নাই। ম্যাচের চতুর্থ ওভারেই দলকে ২১ রানে রেখে নিজের আইপিএল টিমমেট নবীর বলে শেহজাদের কাছে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব। ম্যাচটা বোধহয় তখনই বাংলাদেশের হাত থেকে বের হয়ে গেল। সাকিবের বিদায়ের পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন লিটন দাস এবং মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৩ রান তুললে সাময়িক বিপর্যয় সামাল দেন এই দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৮ম ওভারের শেষ বলে নবীর বলে লিটন আউট হলে আবারও ব্যাকফুটে যায় বাংলাদেশ। আরও একবার আশা জাগিয়েও ৩০ রানেই ফিরে যান লিটন দাস।
১১তম ওভারে রশিদ খান পরপর দুই বলে মুশফিক এবং সাব্বিরকে আউট করলে পুরো ম্যাচই চলে যায় আফগানদের নিয়ন্ত্রণে। অনন্য এক রেকর্ডও গড়েন রশিদ খান। টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ৫০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দারাবাদের হয়ে খেলা এই লেগ স্পিনার। এরপর শুধু বাংলাদেশের অলআউট হওয়াই বাকি ছিল। সেটাও হয়ে যায় ম্যাচের ১৯তম ওভারে। ছয় বল বাকি থাকতেই ১২২ রানে অলআউট বাংলাদেশ। আফগানদের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন রশিদ খান এবং শাপুর জাদরান।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুতেই আফগানদের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার আহমেদ শেহজাদ এবং উসমান ঘানি। ৬২ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন রুবেল হোসেন। কিন্তু তাতেও দমে থাকেনি আফগানদের রান উৎসব। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে স্টানিকজাইর সঙ্গে নিয়ে ২৪ রানের জুটি গড়ে দলকে ৮৬ রানে রেখে ব্যক্তিগত ৪০ রানে আউট হন শেহজাদ। ১৪তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ নবী এবং নাজিবউল্লাহ জাদরানকে ফেরালে বেশ বিপদে পড়ে আফগানিস্তান।
১৪তম ওভার শেষে দলের রান যখন ৪ উইকেট হারিয়ে ৯১ তখনই দলের ত্রাতা হয়ে আসেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারী। মূলত সামিউল্লাহর ১৮ বলে ঝড়ো ৩৬ এবং শেষ দিকে শফিকুল্লাহর ৮ বলে ২৪ বড় সংগ্রহের ভিত পায় আফগানিস্তান। শেষ চার ওভারে ৬৪ রান দিয়ে আফগানদের বড় সংগ্রহের ভিত গড়তে সহায়তা করে বাংলাদেশি বোলাররা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান করে রশিদ খানের দল। বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন আবুল হাসান রাজু এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।