গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরব যান মমতাজ। যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্বীকার হন তিনি। প্রতিবাদ তো দূরের কথা ওহ শব্দটুকু করতে পারেন না নির্যাতিত নারীরা। ভাব এমন যে, টাকার বিনিময়ে আনা নারীদের সবইতো তাদের কেনা। শব্দহীন জীবন, নিরন্তর বর্বর এমন অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সৌদি ফেরত নারী কর্মী মমতাজ (৩১)।
শুক্রবার ভোরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই ঘটনার অবতারণা হয়। পরে ভুক্তভোগী নির্যাতিত নারী মমতাজকে বিমানবন্দরে জ্ঞান হারালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে পাঠানো হয় শনির আখড়া এক স্বজনের বাসায়।
বিমানবন্দর থেকে হুইল চেয়ারে করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে স্বজনের বাসায় পৌঁছে দেয়ার মানবিক দায়িত্ব পালন করেন বেসরকারি সেবা সংস্থা ব্র্যাকের একদল কর্মী।
এদের একজন আল-আমীন নয়ন। তিনি জানান, মমতাজের দেশে ফেরার আগাম সংবাদ আমরা তার পরিবারের কাছ থেকে জেনেছি। শুক্রবার ভোরে তাকে রিসিভ করতে আমরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাই। আসার পর তাকে বিকারগ্রস্ত মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, এ সময় তার কয়েকজন নিকট আত্বীয় এবং গণমাধ্যমকর্মীও বিমানবন্দরে আসে। নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে মমতাজ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলে আমরা তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর জ্ঞান ফিরে আসে এবং তাকে আত্বীয়র বাসায় দিয়ে আসি।
এদিকে মমতাজের দেশে ফেরার সংবাদ শুনে তার ভাই আফজাল হোসেন সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে দুপুরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
আফজাল হোসেন মোবাইলে জানান, আমার বোন আদম বেপারী জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে ৮ মাস আগে সৌদি আরবে যান হাউস গৃহকর্মী ভিসায়। যাওয়ার পর তিনবার ৩৯ হাজার করে টাকাও পাঠান। গত তিন মাস খুব বিপদে আছেন বলে আমাদের দোয়া করতে বলেন। এ সময় তার প্রতি নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও জানান। পাশবিক নির্যাাতন সইতে পারছি না বলেও জানান মমতাজ। এরপর আড়াই মাস কোনো খবর ছিলো না। এরমধ্যে দেশে ফেরার সংবাদ পাঠায়।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ভাগ্য ফিরবে এমন স্বপ্নে ৯ মাস আগে সৌদি আরব গিয়েছিল মেয়েটি। আর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আজ সকালে দেশে ফিরেছেন। মেয়েটির বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার রুদ্রুপুর গ্রামে।
তিনি বলেন, বিমানবন্দর থেকে ভোরে জানানোর পর তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অমাদের তথ্য কর্মকর্তা। তবে ঢাকায় নামার পরও মেয়েটি বিকারগ্রস্ত ছিল। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে মেয়েটি জ্ঞান হারায়। বিমানবন্দরের চিকিৎসকরা জরুরি চিকিৎসা দেয়ার পর তাদের পরামর্শে মেয়েটাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া নেয়া হয়। মেয়েটির অবস্থা বেশ খারাপ। আর কত মেয়ে কতভাবে নির্যাতিত হলে হুশ ফিরবে আমাদের?
উল্লেখ্য, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন। যা মোট অভিবাসন সংখ্যার ১৩ শতাংশ। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিককে অভিবাসনে বাধা দেয়া হলেও পরবর্তীতে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে কিছুটা শিথিল করা হয়।
২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ