ইসরায়েল থেকে সরিয়ে নিয়ে জেরুজালেমে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে পবিত্র এ নগরীকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সেখানে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তার সেই ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে উদ্বোধন করেছেন হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা ও ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার। ইসরায়েল দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে নেয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে ফিলিস্তিনের হাজার হাজার মানুষ।
ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনীর স্নাইপারের গুলি, টিয়ারগ্যাসে প্রাণ গেছে অন্তত ৪১ ফিলিস্তিনির। জেরুজালেমে এমন একদিনে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করা হলো যেদিন বিক্ষোভে উত্তাল গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের রক্ত বন্যা বইছে। সোমবারের এ হতাহতের ঘটনা একদিনে সর্বোচ্চ ফিলিস্তিনির প্রাণহানির অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া আহত হয়েছে অন্তত এক হাজার ৮০০ জন।
জেরুজালেমে দূতাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যাভিড ফ্রাইডম্যান বলেছেন, আজ অামরা ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস চালু করছি। অনুষ্ঠানে মার্কিন ও ইসরায়েলি শীর্ষ কর্মকর্তা এবং রাজনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভিডিও বার্তায় জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধনের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটা অনেক আগে হওয়া উচিত ছিল। নিজস্ব রাজধানীসহ ইসরায়েল একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই সত্যের স্বীকৃতি দিতে পারিনি।’
গত ছয় সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় নিজ ভূখণ্ড ইসরায়েলি বাহিনীর হাত থেকে উদ্ধারে গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন শিরোনামে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে গাজার ক্ষমতাসীন ইসলামী দল হামাস। ইসরায়েল বলছে, সোমবারের ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি সীমান্তে বেড়া ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে।
হামাস নেতৃত্বাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সোমবারের সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি শিশুরাও রয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ও আগুনের কুণ্ডলী নিক্ষেপ করছে ফিলিস্তিনিরা। জবাবে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী স্নাইপারের গুলি, টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করছে। বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করায় গাজা ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে।
মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর ও ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে পুরো সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। সীমান্ত বেড়া পেরিয়ে ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন তারা। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক বছর এই দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা ‘বিপর্যয়’ বা ‘নাকাবা’ দিবস হিসেবে পালন করে। ওই বছর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের নিজ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত হয়।
গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার অত্যন্ত সুরক্ষিত সীমানা বেড়া পেড়িয়ে ইসরায়েলে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে গাজায় লাখো ফিলিস্তিনি পৌঁছেছেন।
তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ ও হেবরনেও বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনিরা। জেরুজালেম থেকে উত্তরাঞ্চলের রামাল্লাহকে বিভক্তকারী কালানদিয়া সামরিক তল্লাশি চৌকির কাছেও বিক্ষোভ করছেন তারা।
ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে এই বিক্ষোভ করে আসছে। ১৫ মে এই বিক্ষোভ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস্ত্যুচুত হয়। ইসরায়েলি অবৈধ ভূমি দখলকে ফিলিস্তিনিরা বিপর্যয় হিসেবে মনে করে।
সোউজন্যে- জাগো নিউজ