আশরাফ আলী। বয়স ৪৭ বছর। ছিলেন সৌদি আরবের প্রবাসী। প্রবাস জীবনে নব্বয়ের শেষ দিকে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা রহিমের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর ফিরে আসেন দেশে। কিন্তু মিয়ানমারের ওই নাগরিকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১৭ সালে তিনি যান মিয়ানমারে। উদ্দেশ্য ছিল ইয়াবার ব্যবসা। সেই থেকে শুরু হয় তার ইয়াবা ব্যবসা। মিয়ানমার-বাংলাদেশে গড়ে তুলেন ইয়াবার সিন্ডিকেট। মাত্র এক বছরেরই প্রবাসী থেকে বনে যান ধনকুবের। এখন শ্যামলী আবাসিক এলাকায় ‘জেড এস এঞ্জেলস’ নামের একটি বিলাশবহুল বাড়িও করেছেন তিনি।
ইয়াবার এই গডফাদার আশরাফ আলীর এমন উত্থান নজর এড়ায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ধরা পড়েছেন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের জালে। বৃহস্পতিবার (৩ মে) দিবাগত রাতে আশরাফ আলী ও তার ভাই মো. হাসানকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় হালিশহরের একটি বাড়ি থেকে জব্দ করা হয় ইয়াবা চালান, যা সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের জব্দকৃত সবচেয়ে বড় চালান।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (বন্দর) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘হটাৎ করে ধনকুবের বনে যাওয়া আশরাফের ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে তার ‘ইয়াবা কানেকশন বেড়িয়ে আসে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে দেশে এসেই মিয়ানমার যান আশরাফ। সৌদি আরবে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা রহিমের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি মিয়ানমারে যান। পরে সেই লিংক কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ে বাংলাদেশে ইয়াবার সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।’
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসায় অল্প সময়ের ব্যবধানে বড় অবস্থান তৈরি করেছেন আশরাফ। তাই এ নিয়ে তার প্রচণ্ড অহংকারও রয়েছে। এমন কী গত রাতে তিনি পুলিশ সদস্যদের হাত করার জন্য দুই কোটি টাকার অফার দেন। এ ছাড়া তার হুমকি-ধমকির শেষ ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যে কজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর তথ্য পুলিশের হাতে রয়েছে, সে অনুপাতে আশরাফ অনেক বড় মাপের। এ ক্ষেত্রে তিনি কারও সহায়তা নেন না। নিজেই মিয়ানমার গিয়ে ইয়াবার চালান রেডি করেন। নিজেই বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। হালিশহরের বাসাটি তিনি ডিস্ট্রিবিউটিংয়ের কাজে ব্যবহার করছিলেন। এখান থেকেই সারা দেশে ইয়াবার চালান দিতেন তিনি।’
নগর গোয়েন্দা পুলিশের এই সহকারী পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসায় আশরাফের অবস্থান সময়ের আলোচিত মুখগুলোর চাইতেও অনেক বেশি। তিনি শুধ মিয়ানমার নয়, সম্প্রতি মাদক ব্যবসাকে আরও বড় করার জন্য থাইল্যান্ডের এক পার্টির সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। এমনকি থাইল্যান্ডে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখাও করেন। তদন্তের খাতিরে ওই সিন্ডিকেটের নামটি এখন প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
মইনুল ইসলাম জানান, এবারের ইয়াবার চালান আনার জন্য গত ৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে বিমানযোগে মিয়ানমার যান আশরাফ। এ সময় তিনি মিয়ানমারের রেঙ্গুনে ‘হোটেল এলিমিউন’ এ অবস্থান করেন। পরে মিয়ানমারের নাগরিক লা-মিম থেকে নিজেই রেঙ্গুন থেকে ইয়াবার চালান বুঝে নেন। গত ৩০ এপ্রিল একটি ট্রলারযোগে ইয়াবার চালান নিয়ে রওয়ানা হন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি সমুদ্রে ট্রলার থেকে ইয়াবার চালানটি স্পিড বোটে স্থানাস্তর করেন আশরাফ আলী। পরে নিজেই স্পিড বোট চালিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। কিন্তু কুতুবদিয়া চ্যানেলে ঝড়ের কবলে পড়ে স্পিড বোট উল্টে গেলে স্থানীয় মাছ ধরার ট্রলারের সহায়তায় ইয়াবা ট্যাবলেটের বস্তাগুলো উদ্ধার করেন আশরাফ।
সম্প্রতি তার ইয়াবার চালান প্রসঙ্গে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (বন্দর) আবু বকর সিদ্দিক জানান, আশরাফ আলী ইয়াবার চালানটি চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশের জন্য শবে বরাতের রাতকে বেছে নেন। গত বুধবার রাতে ভাটিয়ারির জেলে পাড়া ঘাটে পৌঁছায় ইয়াবার চালানটি। এর আগেও এমন ছুটির সময়কে কাজে লাগিয়ে আশরাফ ইয়াবার চালান দেশে প্রবেশ করিয়েছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ