হাঁটছি, প্যারিসের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা গার্দু নর্দ থেকে জরেস পার্কের দিকে। আকাশটা তখন অন্ধকার হয়ে আসছিল, বৃষ্টিও শুরু হলো, তাড়াহুড়া করে পাশেই একটি কফি শপে ঢুকে পড়লাম। কফির চুমুকেই মনে পড়ে গেল স্বদেশে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা।
দু’হাজার সালের দিকে হবে। উঠতি বয়স কত কি করে বেড়াতাম, তখন আমি রোহিতগিরি’র ফটো সাংবাদিক ছিলাম। অফিস থেকে বাড়ি ফিরছি, আকাশে মেঘ জমে আছে, বৃষ্টি হবে হবে ভাব, মোটরসাইকেলের গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে যাচ্ছি। ফের বৃষ্টি শুরু হলো। সড়কের যান-বাহনগুলো এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। ওই সময় বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা যেন অমৃত স্বাদ মনে হচ্ছিল।
বাড়ির পাশেই স্কুল মাঠে ছেলেরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ফুটবল খেলছে, মোটরসাইকেলটা পাশেই স্ট্যান্ড করে নেমে পড়লাম। উফ কি যে মজা ছিল। খেলা শেষে পাশের পুকুরে নামলাম সবাই, একই সঙ্গে গোসল করে আবার ঘরে ফেরা।
আজও প্যারিসে মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হয় কিন্তু ভিজতে ইচ্ছে হয় না, মনে হয় এই আকাশটা আমার না, বৃষ্টি আমাকে আপন ভাবে না। কেন জানি এদেশের বৃষ্টি আমায় টানে না।
প্রিয় স্বদেশ আর মাতৃভূমি দিয়েছে আমায় অনেক কিছুই বুঝেছি সেটা দূর প্রবাসে গিয়ে। ভোগ বিলাশ আর উপভোগ্য করে তুললেও হৃদয়ে নাড়া দেয় ফেলা আসা দিনগুলোর স্মৃতি।
ফরাসিদের সুরে বলতে চাই, জীবন যতদিন আশা ততদিন, আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবন একটি ফুলের বাগানের মতো, রংধনুর মতো, মুক্ত আকাশের মতো, স্বপ্নের ডানা মেলে ভেসে বেড়াতে চাই যেতে চাই দূর অজান্তে। দেখতে চাই জগৎটাকে উপভোগ করতে চাই খুব কাছ থেকে, স্বাদ আর স্বাধ্যের বাহিরে থাকায় অনেক সময় স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যায়, স্বপ্নবাজ সেই সব মানুষদের মতই আমিও স্বপ্ন দেখি, কিন্তু হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ তা দেখাতে পারি না।
ইতিহাসের শেষ নেই, আজ যা ঘটে কাল তা ইতিহাস। সাক্ষী হয়ে থাকে যুগের পর যুগ শতাব্দীর পর শতাব্দী। কবি সাহিত্যিক কিংবা দার্শনিকরা তাদের লেখনিতে যতটা তুলে ধরেন তার বাইরেও অনেক কিছুই অজানা থাকে।
প্রকৃতি মানুষ আর বৈচিত্র ইতিহাস বার বার হাতছানি দিয়ে ডাকে আর নতুন নতুন স্বপ্ন দেখায়। সবার স্বপ্নই একদিন পূরণ হবে। ভালোবাসায় বেচেঁ থাকবে প্রিয় দেশ শতাব্দীর পর শতাব্দী।
লেখক- ফয়সাল আহাম্মেদ দ্বীপ, সৌজন্যে- জাগো নিউজ