বৈদেশিক মুদ্রা বাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে নগদ মার্কিন ডলারের মূল্য ৮৬ টাকায় উঠেছে। আমদানি পর্যায়ের ডলারের দর উঠেছে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা। ডলারের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামও। মঙ্গলবার পাউন্ডের দর বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ ১২১ টাকা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে। এছাড়া ডলারের বাজারে কারও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যাংকগুলো ইচ্ছেমত দাম বাড়াচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীদেরও খরচ বেড়েছে। টাকা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানিকারকরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান বলেন, আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। এতে ডলারের উপর চাপ বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো প্রযোজনের তুলনায় বেশি ডলার ধরে রাখছে। এসব কারণে ডলারের দাম বেড়েছে। তবে বর্তমানে ডলারের দাম একটু বেশিই বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে আমাদের এটি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব আছে। এ বিষয়য়ে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী-দেশের পণ্য ও সেবা উভয়ের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। তাই সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতিতে একের পর এক রেকর্ড করছে দেশ। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
নগদ ডলারের মূল্য সবচেয়ে বেশি উঠেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে (এফএসআইবিএল)। ব্যাংকটিতে মঙ্গলবার প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৮৬ টাকা। বিদেশি খাতের সিটি এনএ নগদ টাকায় ডলার বিক্রি করছে ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা, ব্যাংক আল ফালাহ ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংকই ৮৫ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তঃব্যাংক গড় হিসেবে গতকাল প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য ছিল ৭৯ টাকা ৯৫ পয়সা।
এদিকে ডলারের দাম বাড়ায় সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সর্তক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডলারের দর যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে বলা হয়। একই সঙ্গে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ডলার কিনে না রাখতে নিষেধ করা হয়। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক এতে হস্তক্ষেপ করবে বলে ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়। কিন্তু এরপরও টনক নড়েনি ব্যাংকগুলোর।