প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে নবম অবস্থানে রয়েছে। অভিবাসন ও প্রবাসী-আয় নিয়ে সোমবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড রেমিটেন্স : রিসেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড আউটলুক’-২০১৮ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শীর্ষ ৩০ দেশের রেমিটেন্স প্রবাহের চিত্র রয়েছে বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। আর সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে প্রায় ৭৮ লাখ বাংলাদেশি বাস করেন, তারাই এ বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম দেশ, যে দেশের এত বিপুলসংখ্যক প্রবাসী রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, সারা বিশ্বে এখন সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসী ভারতীয়রা। তারা এ বছর মোট ৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলার নিজ দেশে পাঠিয়েছেন। বর্তমানে ১ কোটি ৬৪ লাখ ভারতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশ, আবার এ দেশের মানুষই সবচেয়ে বেশি প্রবাসী।
রেমিটেন্স পাঠানোর এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন। চীনের সর্বশেষ ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে এক বছরে রেমিটেন্স এসেছে ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফিলিপাইন। সর্বশেষ হিসাবে দেশটিতে এক বছরে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে মেক্সিকো (৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার), পঞ্চম স্থানে নাইজেরিয়া (২ হাজার ২০০ কোটি ডলার), ষষ্ঠ স্থানে মিসর (২ হাজার কোটি ডলার), সপ্তম স্থানে পাকিস্তান (২ হাজার কোটি ডলার), অষ্টম স্থানে ভিয়েতনাম (১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার) ও ৯০০ কোটি ডলার নিয়ে দশম ইন্দোনেশিয়া।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে প্রবাসী আয় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, মালেয়েশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। এ বছর সৌদিতে ৪ লাখ শ্রমিক পাঠাতে না পারার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে লেনদেন ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত বছর এ অঞ্চলে প্রবাসী আয় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয়ের প্রধান ভরসা প্রবাসী অদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ শ্রমিক। অভিবাসনের (বিদেশ গমন) খরচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি বড় সমস্যা।
বাংলাদেশের একজন স্বল্পদক্ষ কর্মীকে কাজ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে হলে দুই হাজার ৯৩৫ থেকে চার হাজার ৮৭০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হয়। আর সেখানে যাওয়ার পর তিনি আয় করেন মাসে গড়ে ৪০০ ডলার। বাংলাদেশ অভিবাসনে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ১২টি দেশে তাদের প্রতিনিধি পাঠাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেমিটেন্স আদান-প্রদানে বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি করিডরের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ ১৬তম অবস্থানে রয়েছে। এ করিডর দিয়ে বছরে ৫৬০ কোটি ডলার আদান-প্রদান হয়। এ ছাড়া সৌদি আরব-বাংলাদেশ করিডরটির অবস্থান বিশ্বে ২৩তম।
এ করিডর দিয়ে ৪৯০ কোটি ডলার আদান-প্রদান হয়েছে, যার সিংহভাগই এসেছে বাংলাদেশে। বিশ্বে রেমিটেন্স আদান-প্রদানকারী করিডরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় করিডরটি হল ‘যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো’ করিডর।