একমাত্র ছেলে মহিউদ্দিন রাশেদের মৃত্যুর সংবাদ সহ্য করার মতো শক্তি ছিল না মা কুলফুরের নেছার। চেতনা হারান তিনি। স্বজনেরা দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান, স্ট্রোকে আক্রান্ত তিনি।
গত বুধবার সৌদি আরবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হন ফেনীর মহিউদ্দিন রাশেদসহ ছয়জন। রাশেদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর মাতম শুরু হয় তাঁর গ্রামের বাড়িতে। সংবাদ শুনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন কুলফুরের নেছা। রাতে প্রথমে তাঁকে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ফেনী সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো জ্ঞান ফেরেনি কুলফুরের নেছার।
মো. মহিউদ্দিন রাশেদ (৩৫) ছিলেন ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর বিরিঞ্চি এলাকার বাসিন্দা। বাবার নাম রফিকুল ইসলাম।
মা, বাবা, স্ত্রী শিখা মজুমদারসহ তিন সন্তান জিহান (৯), সাফওয়া (৫) ও আলিফকে (৫ মাস) নিয়ে ছিল রাশেদের সংসার। পরিবারে একটু আর্থিক সচ্ছলতা আনতে তিন মাস আগে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রাশেদ ছিলেন সবার ছোট। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মা-বাবার দেখাশোনা তিনিই করতেন।
একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাবা রফিকুল ইসলাম পাগলপ্রায়। বাড়িতে স্ত্রী শিখা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আত্মীয়স্বজন সবাই ছুটে এসেছেন বাড়িতে। চারদিকে কান্না দেখে অবুঝ সন্তানেরা কিছু না বুঝে কাঁদছে।
রাশেদের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমন হবে জানলে ছেলেকে কখনোই বিদেশ পাঠাতাম না।’ এখন কেবল ছেলের লাশটা ফেরত চান তিনি। লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে সৌদি আরবের হাইল প্রদেশের হুলাইফা এলাকায় ওই অগ্নিকাণ্ডে চার বাংলাদেশি পরিবারের ছয়জন মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন একজন। সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা জানানো হলেও আগুন লাগার কারণ বলা হয়নি। তবে ইউএনবির এক খবরে বলা হয়, বাসায় গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।