জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নে ১০ হাজার জামাইকে বরণের মধ্য দিয়ে জামাই মেলা ও বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন শনিবার সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার পর ১০ হাজার গামছা দিয়ে জামাইদের বরণ করেন মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামাইদের প্রতীকী শ্বশুর আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জয়পুরহাট মাত্রাই মডেল কলেজের অধ্যক্ষ সাহবুব হাসান, মাত্রাই সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ ফরিদ উদ্দিন আখতার, জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল কাদের মুকুল, স্থানীয় সমাজ কর্মী ও ব্যবসায়ী নেতা আনোয়ারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সহস্রাধিক মানুষ।
পরে দিনব্যাপী পুঁথি পাঠ, বাউল গান, সারি গান, মুর্শিদী গান, বেদে-বেদেনীর সাপ খেলা,বদন খেলা , বউচি খেলা, লাঠি খেলা, নাগরদোল সহ গ্রামীণ ঐতিহ্য প্রদর্শিত হয়।
বিকেলে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন চিত্র নায়িকা অপু বিশ্বাস। তিনি অনুষ্ঠানে আগত ১০ হাজার জামাইকে অভিবাদন জানান।
মাত্রাই ইউনিয়নের নিমন্ত্রিত ১০ হাজার মেয়ে ও জামাই বৈশাখের দাওয়াত পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। একই ইউনিয়নের গাড়ইল গ্রামের স্থানীয় জামাতা ফরিদ আহম্মেদ, পার্শ্ববর্তী আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বোরাই গ্রামের বাসিন্দা ও মাত্রাই ইউনিয়নের শালগুন গ্রামের আব্দুল গনির জামাতা সুজাউল ইসলাম, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার বাসিন্দা ও মাত্রাই ইউনিয়নের শিশ সমুদ্দুর গ্রামের জামাতা আব্দুস সালাম, একই গ্রামের অপর জামাতা কালাই পৌরসভার পাঁচশিরাা এলাকার বাসিন্দা ফারুখ হোসেনসহ অনেক জামাতা জানান, দেশের মধ্যে এমন আয়োজন হয়েছে বলে তাদের জানা নাই। প্রীতিভোজ ছাড়াও হালের শীর্ষ চিত্র নায়িকা অপু বিশ্বাস তাদের অভিবাদন জানানোয় মুগ্ধ জামাইরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক জামাই অভিযোগ করেন, বিয়ের পর অনেকেই শ্বশুর বাড়িতে তেমন আদর পাননি। আজ তাদের প্রতিকী শ্বশুর ইউপি চেয়ারম্যান যেভাবে তাদের আপ্যায়িত করছেন তা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মাত্রাই গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের মেয়ে বিধবা আনোয়ারা পারভীন কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আব্বা মারা যাওয়ার পর কেউ খোঁজ খবর নেয়নি। প্রতীকী বাবা ইউপি চেয়ারম্যান গত বছর থেকে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে তাদের আদর-যত্ন করছেন, খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এটা ভুলার নয়।
বগুড়া সদরের আবু জাফর ও সৌদি প্রবাসী আব্দুল হাকিমসহ অনেক জামাই বলেন, নিজের শ্বশুর এভাবে দাওয়াত না দিতে পারলেও মাত্রায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাদের দাওয়াত কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ জানান। আমরা ১০ হাজার জামাই একত্রিত হতে পেরে আনন্দিত। মনে হচ্ছে আমরা অনেকগুলো ভায়রা ভাই একত্রিত হলাম।
মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ দিন দিন স্বার্থপর হচ্ছে। পরস্পরের মধ্যে বন্ধন তৈরি করতেই এই আয়োজন। এমন আয়োজনের মাধ্যমে একদিকে পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়ন হয়, অন্যদিকে সামাজিকভাবে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাও সম্ভব।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ