Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

quoteবাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত বিষয় হচ্ছে কোটাপদ্ধতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনগ্রসর গোষ্ঠীর অগ্রসরতার জন্য উচ্চ শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে কিছু সংরক্ষিত আসন থাকে। বাংলাদেশেও রয়েছে তেমন কিছু সংরক্ষিত আসন বা কোটা। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%, নারী কোটা ১০%, জেলা কোটা ১০%, উপজাতি কোটা ৫%, প্রতিবন্ধী কোটা ১% নিয়ে মোট ৫৬% সরকারি চাকরি হয় কোটার মাধ্যমে। বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে বর্তমানে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকার কারণে কম যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষদের চাকরি হচ্ছে বেশি।

এতে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হওয়ার সুযোগ পায়। দীর্ঘদিন ধরে কোটা সংখ্যা কমানো নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠলেও কোনো সরকার কোটা পদ্ধতির সংস্কার করেনি। দীর্ঘদিনের দাবি থেকে সেটি ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ কোটাপদ্ধতির সংস্কার চেয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। বাংলাদেশের কোটাপদ্ধতি নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা তাহলে জানা যাক বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো কোটাপদ্ধতি কত শতাংশ ও কিভাবে সেটি প্রয়োগ হয়।

chardike-ad

ভারত: প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা রয়েছে। ভারতে মোট ৪ ধরণের কোটা রয়েছে; উপজাতি কোটা, বিভিন্ন জাত ভিত্তিক কোটা, অন্যান্য অনগ্রসরদের জন্য কোটা এবং বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু কোটা। জনসংখ্যা অনুপাতে ভারতে সরকারি চাকরির যথাক্রমে ১৫ ও ৭ দশমিক ৫ ভাগ পদ দলিত শ্রেণী ও আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী সরকারি নিয়োগে কোটার সমষ্টি কোনোক্রমেই মোট শূন্যপদের ৫০ ভাগের বেশি হতে পারবে না। ভারতের এই কোটাব্যবস্থা কোনো চিরস্থায়ী পদ্ধতিও নয়। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে যে জাতীয় অনগ্রসর জনগোষ্ঠী কমিশন (National Commission for Backward Classes) গঠন ক রা হয়, তার অন্যতম দায়িত্বই হচ্ছে কোটাব্যবস্থায় নানা অসংগতি পর্যালোচনা করে এটির ক্রমাগত সংস্কার করা। কমিশন ইতিমধ্যে সাংবিধানিক পদাধিকারী, আমলা, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ সচ্ছল শ্রেণীর সন্তানদের ‘অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠী’ হিসেবে বিবেচনার অযোগ্য ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি কোটা প্রথায় ওই দেশে একটি পরিবারের মাত্র একজনই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

পাকিস্তান: পাকিস্তানের কোটা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যার ভিত্তিতে। বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা উপর নির্ভর করে সেই অনুপাতে কোটা সুবিধা প্রদান করা হয় পাকিস্তানে। পাকিস্তানের কোটা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যৌক্তিক পরিমাণ মানুষ যেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে সমগ্র দেশ থেকে মাত্র ৭.৫ শতাংশ চাকরি মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞাতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। বাকি ৯২.৫ শতাংশ চাকরি বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য সংরক্ষিত। সরকারি চাকরি সবচেয়ে বেশি কোটা বরাদ্ধ রয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশের জন্য। পাঞ্জাবের ৫০ শতাংশ, সিন্ধ প্রদেশের জন্য ১৯ শতাংশ, খাইবার-পাখতুনওয়ার জন্য রয়েছে ১১.৫ শতাংশ, বালুচিস্তানের জন্য ৬ শতাংশ আর গিলটের জন্য রয়েছে ৪% আর আজাদ কাশ্মীরের জন্য ২ শতাংশ।

মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা ৩ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার। মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৫০.১ শতাংশ মালয়, ২২.৬ শতাংশ চাইনিজ, ৬.৭শতাংশ ভারতীয়,১১.৮ শতাংশ স্বদেশজাত এবং ৮.৮ শতাংশ অন্যান্য। ধর্মীয় দিক থেকে মোট ৬০.১ শতাংশ মুসলিম, ১৯.৮ শতাংশ বৌদ্ধ, ৯.২ শতাংশ খ্রিস্টান, ৬.২শতাংশ হিন্দু এবং ৩.৪ শতাংশ অন্যান্য। মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতিগত কোটার মোট ৫৫ শতাংশ সুবিধা পেয়ে থাকে মালয় জনগোষ্ঠী।উচ্চশিক্ষা, চাকরি, স্বল্পমূল্যে বাসস্থানসহ সকল ক্ষেত্রে ৬০শতাংশ ভোগ করে মালয় জনগোষ্ঠী বাকি ৪০% সুবিধা ভোগ করে অন্যান্য জনগোষ্ঠী। তবে চাকরির ক্ষেত্রে গোষ্ঠীগত সুবিধা মিললেও মেধার পরিচয় দিয়েই প্রবেশ করতে হয়। সরকারি অর্থায়নে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত সেখানে মোট সিটের মোট ১৯ শতাংশ পায় চাইনিজরা এবং ৪ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভুত জনগোষ্ঠী। বাদ বাকি সকল সিট পায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয় জনগোষ্ঠী, যারা ভূমিপুত্র নামেও পরিচিত।

চীন: চীনে নারীদের জন্য একসময় ২০ ভাগ কোটা ছিল। তবে নব্বইয়ে দশকে ওই কোটা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দেশটিতে এখনও ১.৫ ভাগ চাকরি সংরক্ষণ করা হয়।

কানাডা: কানাডাতেও চাকরিতে নিয়োগে কোটা প্রথা রয়েছে. তবে তা প্রয়োগ হয় প্রকৃত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীদের জন্য। কানাডায় মূলত চারটি শ্রেণীর জন্য কোটা প্রযোজ্য। চারটি শ্রেণী হচ্ছে নারী, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু। চারটি শ্রেণীর মোট কত শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা সুস্পষ্ট ভাবে কানাডার এমপ্লয়মেন্ট ইকুইটি অ্যাক্টে নির্দিষ্ট ভাবে বলা না হলেও সেটা কখনোই মেধার চেয়ে বেশি অর্থাৎ শতকরা ৫০ভাগ নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন: নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্তদেশগুলো ২০১২ সালে এক পরিকল্পনা গ্রহণ করে যার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে নন-এক্সিকিউটিভ চাকরিগুলোতে যেন ৪০ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এছাড়া শারীরিকভাবে যারা অক্ষম তাদের জন্য কোটায় সংরক্ষণ হার শতকরা ৪ ভাগ। বাকি ৫৬ ভাগ নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে।

যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রে কেবল শতকরা ৮ ভাগ চাকরি প্রতিবন্ধিদের জন্য সংক্ষিত থাকে। দেশটির শ্রম বিভাগ কোটার পরিবর্তে এটাতে ‌’অক্ষমতার মানদণ্ড’ হিসাবে উল্লেখ করেছে।১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র কোটা সিস্টেমটি পরিত্যাগ করে আইন পরিবর্তনের পরিবর্তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের প্রক্রিয়া এবং কর্মসংস্থান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলকভাবে অবৈধ বলে আইন প্রণয়নের পরিবর্তে অগ্রাধিকার প্রদান করে।

তবে সরকারি চাকরিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ কোটার ভিত্তিতে সংরক্ষণ করার নজির পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই।