রোববার গভীর রাতে বাতি নিভিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থানরত ছাত্রীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৩টায় টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সড়ক বাতি নিভিয়ে ছাত্রীদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। রাতের অন্ধকারে কেন পুলিশ ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন তিনি।
জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে, এমন খবরে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে আসেন।
সর্বপ্রথম সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা সড়কে নেমে এসে বিক্ষোভ করেন। তারা হাইকোর্ট-বঙ্গবাজার সড়ক দিয়ে মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে আসার চেষ্টা করেন।
এর পর নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত দিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা করেন। তারা স্যার এএফ রহমান হলের সামনে পৌঁছালে সেখানে ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালায়। পরে টিএসসিসংলগ্ন রোকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরাও সড়কে নেমে আসেন। সব মিলিয়ে হাজারেরও বেশি ছাত্রীকে পুলিশের হামলার বিরুদ্ধে মিছিল করতে দেখা যায়।
ওই সময় ছাত্রীদের নেতৃত্বে থাকা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌস জাহান অন্তি বলেন, আমাদের ভাইয়েরা যতক্ষণ রাস্তায় থাকবে আমরাও থাকব। ছাত্রদের ওপর পুলিশি হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবও দাবি করেন তিনি। গভীর রাতে হল থেকে মিছিল বের করার বিষয়ে ছাত্রীরা জানান, সাধারণ ছাত্রদের ওপর পুলিশ হামলা করছে, এমন খবর পেয়ে আমরা যে যেমন পোশাকে ছিলাম, সেভাবেই সড়কে বের হয়ে আসি।
মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার পর ছাত্রীরা টিএসসিতে অবস্থান নেন। সেখানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছাত্ররা গোল হয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করে রাখেন। বেষ্টনীর ভেতর থেকে ছাত্রীরা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে রাত পৌনে ৩টার দিকে টিএসসিতে ছাত্রছাত্রীদের লক্ষ্য করে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছুড়তে থাকে। ওই সময় সেখানে ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীও হামলায় অংশ নেন।
এর পর ছাত্রীরা টিএসসির ভেতরে, রোকেয়া হল ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে গিয়ে আশ্রয় নেন। অন্যদিকে ছাত্ররা বাংলা একাডেমির ভেতরে আশ্রয় নেন।
জানা গেছে, টিএসসিতে শত শত ছাত্রী আটকা পড়েন। এ সময় তাদের সঙ্গে রোকেয়া হলের হাউস টিউটর, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নীলিমা আক্তার অবস্থান করেন। পরে সকাল সোয়া ৬টার দিকে প্রায় ৩০০ ছাত্রীকে নিয়ে রোকেয়া হলে যান এ শিক্ষকা। সাংবাদিকদের তিনি জানান, গভীর রাতে টিএসসিতে আটকেপড়া ছাত্রীদের সঙ্গে আমি সারারাত ছিলাম। সকাল হলে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাদের সেখান থেকে বের করে হলে নিয়ে আসি। সুত্রঃ যুগান্তর