Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

abidaবাংলাদেশে কোরিয়ার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে শিল্পখাতের উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।

গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে এফডিআইয়ের অন্যতম বৃহৎ উৎস এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) সবচেয়ে বড় বৈদেশিক বিনিয়োগকারী। এটাই সব নয়। কোরিয়া থেকে আমরা আরো এফডিআই পেতে পারি।’

chardike-ad

রাষ্ট্রদূত জানান, কোরিয়ার বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং এবং এলজি খুব শিগগিরই যৌথ বিনিয়োগের আওতায় বাংলাদেশে তাদের পণ্য উৎপাদন শুরু করবে। যার ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। চীনে থাকা বিপুল পরিমাণ কোরীয় বিনিয়োগ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে জানিয়ে আবিদা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মিশন দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

চট্টগ্রামের মিরসরাই বা কক্সবাজারের মহেশখালীতে দক্ষিণ কোরিয়ান ইপিজেড তৈরিতে দেশটির বিনিয়োগকারীদের কয়েকশ একর ভূমি দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। কিছু কোরীয় কোম্পানি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। আবার কিছু কোম্পানি দেশের অন্যস্থানে বিনিয়োগ করতে চায়। ‘আমি মনে করি, এসব উদ্যোগ নিশ্চিতভাবেই আমাদের দুই দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে এবং বাণিজ্য ও ব্যবসায়ীক সম্পর্ককে আরো গভীর করবে,’ যোগ করেন রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এখানে যদি কোনো কোরিয়ান বিনিয়োগকারী উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করে তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুবিধা পাবে। সেই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী বৈশ্বিক বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিতে পারবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্রমাগত বাড়ছে এবং ২০১৬-১৭ সালে তা ১৫০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। ২০০৫ সালে এর পরিমাণ ছিল মাত্র দুই কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।

তবে রাষ্ট্রদূত স্বীকার করেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বিপুল পরিমাণে বাংলাদেশের প্রতিকূলে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল মাত্র ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। রপ্তানি পণ্যের বেশির ভাগই হলো শিল্প খাতে ব্যবহৃত উপকরণ ও কাঁচামাল।

আবিদা ইসলাম জানান, বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোতে অন্যতম বড় বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি ৭০-এর দশকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগের পথপ্রদর্শক এবং ৯০-এর শেষ দিকে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। রাষ্ট্রদূত বলেন, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বস্ত্র, চামড়া ও জুতা শিল্পে কোরিয়ার উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে। যাতে ৮০ হাজারের অধিক বাংলাদেশি কর্মরত আছেন।

কক্সবাজারের মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) টার্মিনাল এবং একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশের টি কে গ্রুপের সঙ্গে মিলে বিনিয়োগ করেছে কোরিয়ার নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস কে গ্রুপ। দুই দেশ ইতিমধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিমান সেবা, ভিসা মওকুফ, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, পরিবেশ এবং জনশক্তি রপ্তানির মতো বিভিন্ন খাতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে।

‘কিছু সমঝোতা স্মারক সংশোধন এবং হালনাগাদ করতে হবে। যার ফলে আমাদের বর্তমান সহযোগিতার মাত্রা অবশ্যই আরো সম্প্রসারিত হবে,’ যোগ করেন আবিদা ইসলাম। কোরিয়া প্রায় পাঁচ হাজার পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের জন্য অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র রয়েছে যা দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের নজরে নিতে হবে বলে জানান এ কূটনৈতিক।

‘আমি মনে করি, যদি দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, চামড়া এবং আরো পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানি করে তাহলে আমাদের বর্তমান বাণিজ্যিক চিত্রে উন্নতি আসবে’, তিনি বলেন। কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা নির্মাণ, আইটি এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত আবিদা।

টেলিযোগাযোগ, পাট ও চামড়া, ওষুধের সক্রিয় উপাদান (এপিআই), তৈরি পোশাকের ফ্যাশন শিল্প, মাঝারি আকারের জাহাজ নির্মাণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের মতো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গঠন, আইসিটি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, অবকাঠামো, ভারী শিল্প এবং হালকা প্রকৌশলের মতো খাতেও বিনিয়োগে দক্ষিণ কোরিয়ানরা এগিয়ে আসতে পারে বলে মত দেন তিনি।

বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ কোরিয়ার সাথে উষ্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সক্রিয় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে। ‘আমরা একই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নীতি ধারণ করি এবং দুই দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমাদের আকাঙ্ক্ষাও এক। সেই সাথে বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রেও আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করছি।’

বাংলাদেশে ‘কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা)’ কার্যক্রম নিয়ে রাষ্ট্রদূত আবিদা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ইডিসিএফ (ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড) এবং কোইকা বাংলাদেশে সংক্রিয়ভাবে উপস্থিত রয়েছে এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতের অনেক প্রকল্পে তারা সাহায্য ও সহযোগিতা করছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোইকা তহবিলের আওতায় বাংলাদেশে তিন কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয়ে ১৯টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে চলমান আছে আটটি প্রকল্প, যাতে মোট ব্যয় হবে পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কোরিয়া সরকার রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি যে মানবিক সহায়তা করেছে, আমরা তার ভূয়সী প্রশংসা করি এবং ধন্যবাদ জানাই। আমরা আশা করি আগামীতেও এই রাজনৈতিক সমর্থন বজায় থাকবে।’

দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানি নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে কোরিয়ায় যাওয়া দক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবীদের সংখ্যা খুবই কম। ‘এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) নামের সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা আমাদের জনশক্তির বেশির ভাগই নিম্ন দক্ষতাপূর্ণ খাতে নিয়োজিত রয়েছেন।’

যেহেতু কোরিয়ার নিজস্ব কর্মী সংখ্যা সীমিত হয়ে আসছে তাই ভবিষ্যতে তাদের আরো অধিক বিদেশি শ্রমিক দরকার হবে। যার ফলে বিদেশি শ্রমিকদের চাহিদা ও সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে আবিদা ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু এই খাতে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আমাদের প্রতিযোগী রয়েছে, তাই প্রথম সুযোগেই ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে আমাদের কর্মীবাহিনীকে প্রস্তুত করতে দ্রুত কাজ করতে হবে।’