নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তে পাইলট, ক্রুসহ ২৬ বাংলাদেশি মারা গেছেন। এদের মধ্যে ২৫ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত অপর বাংলাদেশির নাম জানা গেলেও তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি, তিনি হলেন নিউইয়র্ক প্রবাসী বিলকিস আরা মিতু।
সানজিদা হক, মো. রফিক উজ জামান এবং অনিরুদ্ধ জামান: সানজিদা হক সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজনের) সহযোগী সমন্বয়কারী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। তার স্বামী রফিক-উজ জামান ঢাকায় প্রতিবন্ধীদের অধিকারবিষয়ক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। সানজিদা হক ও রফিক-উজ জামানের একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ। অনিরুদ্ধ রাজধানীর ধানমন্ডি গর্ভমেন্ট বয়েজ স্কুলের ছাত্র। একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধকে নিয়ে ওই দম্পতি রাজধানীর শুক্রাবাদে থাকতেন।
এফ এইচ প্রিয়ক এবং তামারা প্রিয়মনি: শ্রীপুরের ফারুক হোসেন প্রিয়ক বা এফ এইচ প্রিয়ক ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর রাজধানীর নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। নেশা হিসেবে ফটোগ্রাফার পেশাকেই বেছে নেন। আর তামারা প্রিয়মনি তার একমাত্র সন্তান।
ফয়সাল আহমেদ: ফয়সাল আহমেদ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখীর স্টাফ রিপোর্টার। তিনি প্রধানমন্ত্রী বিটের প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর।
নাজিয়া আফরিন চৌধুরী: নাজিয়া আফরিন চৌধুরী পরিকল্পনা বিভাগের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সহকারী প্রধান। তিনি ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা। রাজধানীর টিপু সুলতান রোড ওয়ারির বাসিন্দা নাজিয়া আফরিনের স্বামী ব্যবসায়ী মনিরুল হাসান। তারা ফার্মগেট এলাকায় থাকতেন। প্রকৌশলীতে পড়াশোনা করা নাজিয়া অস্ট্রেলিয়া থেকে মাস্টার্স করেন।
উম্মে সালমা: উম্মে সালমা পরিকল্পনা বিভাগের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সহকারী প্রধান। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দিমুলিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আলীর মেয়ে সালমা ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় থাকতেন তিনি। তার স্বামী মোহাম্মদ মাসুদ উদ্দিন ভূঁইয়া একজন চাকরিজীবী। তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে।
তাহারা তানভীন শশী রেজা: মানিকগঞ্জের মেয়ে তাহিরা তানভীন শশীর বাবা রেজা মোহাম্মদ জামান পেশায় চিকিৎসক। তার স্বামী রেজওয়ানুল হকও চিকিৎসক। শশী চেয়েছিলেন আইন ও অপরাধ নিয়ে পড়তে। এ চাওয়া পূরণ করতে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়েছেন। এরপর ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করার সুযোগ পান তিনি।
পিয়াস রায়: বরিশালের পিয়াস রায় ঘুরতে ভালোবাসতেন। পিয়াসের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের মধুকাঠি গ্রামে। তবে তিনি বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডের এম এ গফুর সড়ক সংলগ্ন বাসায় বাবা-মার সঙ্গে থাকতেন। পিয়াসের বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় নলছিটি উপজেলার চন্দ্রকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং মা পূর্ণিমা রায় বরিশাল নগরীর আলেকান্দা এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পিয়াস গোপালগঞ্জের সাহেরা খাতুন মেডিকেল কলেজ থেকে এ বছর ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেন। গত ৫ মার্চ তার পরীক্ষা শেষ হয়। দুই ভাই বোনের মধ্যে পিয়াস রায় ছিলেন বড়।
মো. রকিবুল হাসান: নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত প্রকৌশলী রকিবুল হাসান সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই গ্রামের মৃত. রবিউল করিমের ছেলে। রকিবুল মাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। একমাত্র বড় বোন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও আখতারা বেগম: নজরুল ইসলাম এবং আখতারা বেগম দম্পতির বাড়ি রাজশাহীর উপশহর এলাকায়। নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আক্তার বেগম রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিক। দু’জনেই সম্প্রতি অবসরে গেছেন।
মো. হাসান ইমাম ও বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু: হাসান ইমাম ও বিলকিস বানু দম্পতির বাড়ি রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকায়। এদের মধ্যে হাসান ইমাম সাবেক যুগ্মসচিব ও বিলকিস বানু নাটোরের লালপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন।
মিনহাজ বিন নাসির ও আঁখি মনি: মাত্র ১৩ দিন হলো বিয়ে হয়েছে আঁখি মনি ও মিনহাজ বিন নাসিরের। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে হানিমুন যাচ্ছিলেন ওই দম্পতি। এ নবদম্পতির বাসা রাজধানীর মহাখালীতে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হলুদ আর ৩ মার্চ রিসিপশন হয় আঁখি মনি ও মিনহাজ বিন নাসিরের।
এস এম মাহমুদুর রহমান: এস এম মাহমুদুর রহমান রানার অটোমোবাইলসের হেড অফ সার্ভিস ও সিনিয়র ম্যানেজার (কাস্টমার কেয়ার)। তার বাড়ি ফরিদপুর।
মো. মতিউর রহমান: মো. মতিউর রহমান রানার অটোমোবাইলসের অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার। তার বাড়ি ফেনী।
মো. নুরুজ্জামান: নুরুজ্জামান বাবু রানার অটোমোবাইলসের জুনিয়র অ্যাসিসটেন্ট ফোরম্যান। তার বাড়ি পাবনা।
আলিফুজ্জামান: আলিফুজ্জামানের বাড়ি খুলনা। তিনি খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা বারোপুলিয়া মোড়ের আসাদুজ্জামান মোল্লার ছেলে।
আবিদ সুলতান: ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান বিধ্বস্ত বিমানটির পাইলট ছিলেন।
পৃথুলা রশীদ: পৃথুলা রশীদ বিধ্বস্ত বিমানটির সহকারী পাইলট ছিলেন।
মোহাম্মদ শাফি খাজা হুসাইন: মোহাম্মদ শাফি খাজা হুসাইন বিধ্বস্ত বিমানটির কেবিন ক্রু ছিলেন।
নাবিলা ফারহিন: শারমিন আক্তার (নাবিলা ফারহিন) বিধ্বস্ত বিমানটির কেবিন ক্রু ছিলেন।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে চার ক্রু ও ৬৭ আরোহী নিয়ে বাংলাদেশি ইউএস-বাংলার বিএস-২২১ ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়। এতে অর্ধশত যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। ঘটনাস্থলে মারা যান ৩২ জন। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২১ যাত্রী।
উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশি, ৩৩ জন নেপালি, একজন মালদ্বীপ ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। প্রাপ্তবয়স্ক ৬৫ এবং দুই শিশু ছিল
সৌজন্যে- জাগো নিউজ