আমার পরিচিত এক ভাই সৌদি আরবের রিয়াদে থাকেন। ৭/৮ মাস হলো সেখানে গেছেন। যেই কম্পানিতে কাজ করেন তারা বেতন আটকিয়ে দিছে। যারা মিডিলইস্ট থাকেন তারা জানেন, একবার বেতন আটকা পরলে বের হয়ে আসা কত কঠিন। দুই মাস যখন বেতন দেয় না তখন থেকেই সে বেতনের জন্য চাপ দিতে থাকে। কম্পানির অবস্থা বেগতিক দেখে পরিচিতজনের মাধ্যমে দাম্মামে একটা চাকরি ঠিক করেন। বেতনও ভাল। কিন্তু এত পরিশ্রমের টাকা ফেলে আসতেও মন সায় দেয় না। কম্পানির মালিকের হাতে পায়ে ধরেও বেতনের এক টাকাও মিলে না।
কম্পানি শুধু সামনের সপ্তাহ বলে। এভাবে বলতে বলতে আরো আরা তিন মাস। মোট পাঁচ মাস হলো বেতন দেয় না। এদিকে দেশে তার পরিবারের অবস্থা শোচনীয়। ঋণের বোঝা মাথায়। বিবি বাচ্চা বেশ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
এমতবস্থায় ভাই টি কি করবেন?
পরিবারের অবস্থার কথা চিন্তা করে হারও মানতে পারে না। আবার রেগে গিয়ে যে মালিকের মাথায় বাড়ি দিবে সেটাও সম্ভব না।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আত্মহত্যা করবেন। এক লোক মারফত কম্পানিতে খবর পাঠিয়েছেন ঋণের দায়ে তার বাবাকে জেলে নেয়া হয়েছে, তার পরিবার টাকার অভাবে না খেয়ে রয়েছে। এমতবস্থায় তার আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নাই। তাই সে গাড়ির নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে।
যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। লোকটি কম্পানির পাশেই একটি মহা সড়কের দিতে হাটতে থাকে। মহাসড়কে গিয়ে ধীর ধীরে মেন রোডের দিকে অগ্রসর হয়। ঝড়ের গতিতে দুইপাশ থেকে গাড়ি আসতে থাকে। লোকটি গাড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে শেষবারের মত পরিবারের সবার মুখ কল্পনা করে নেয়।
এদিকে এই খবর কম্পানির মালিকের কানে পৌঁছে যায়। মালিক কয়েকজনকে যেতে বলে তাকে থামাতে। সবাই বলে ও কারো কথায় থামবে না। মালিক জানালা দিয়ে দেখতে পায় যে, অনেক দূরে সত্যি সত্যিই ছেলেটি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। কিন্তু ততক্ষণে লেট হয়ে গেছে। সে তো অনেক দূরে …
তারপরও কি করবে? পুলিশি ঝামেলায় পরবে। তাই অফিস থেকে বের হয়ে মালিক নিজেই শুরু করে দৌড়। আর চিল্লায়ে চিল্লায়ে ডাকতে থাকে: ইয়া সাদিক … ইয়া সাদিক …
মালিক কাছে আসতে থাকে আর ছেলেটিও রোডের মাঝখানে যেতে থাকে। এদিকে ছেলেটিকে দেখে কয়েকজন পথচারি জড়ো হয়। তাকে থামতে বলে।
কিছুক্ষণের মধ্যে মালিক কাছে চলে আসে। ছেলেটির পায়ে ধরে মাফ চেয়ে এক মাসের বেতন হাতে দিয়ে বলে যে, আপাতত তোর বাবাকে জেল থেকে বের কর। বাকি টাকা অল্প কিছুদিনের মধ্যে দিয়ে দিচ্ছি।
আজ সকালে ছেলেটি দেশে ফোন দিয়ে তার স্ত্রীর কাছে হেসে হেসে কথাগুলো বলতেছিলো। তার ভাষ্যনুযায়ী এটা সাজানো নাটক ছিলো।
হ্যা! আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা সাজানোই ছিলো। কিন্তু ছেলেটির উপর অত্যাচার ও তার সার্বিক অবস্থা কোনোভাবেই আত্মহত্যা করার মত পরিস্থিতির চেয়ে ভালো ছিলো না। কারণ, এমন অভিনয় না করলে সে একটি টাকাও পেতো না।
অথচ, সউদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে হাজার হাজার বাঙালি ভাই তাদের প্রাপ্য অধিকার পেতে এমন আত্মহত্যার অভিনয় করতে হতো না।
লেখকঃ মাহমুদুল হাসান কায়রো