মরিশাস ও সেশেলস দ্বীপপুঞ্জ সরকার বাংলাদেশ থেকে ৪৫ হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে চলতি মাসেই মরিশাস ও সেশেলস দ্বীপপুঞ্জের দু’টি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তারা ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বর্তমানে মরিশাসে বাংলাদেশের ২২ হাজারের বেশি কর্মী কর্মরত রয়েছেন। সেশেলস দ্বীপপুঞ্জে বাংলাদেশী ৫ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন। নতুন করে আরও ৪৫ হাজার কর্মী নিয়োগের বিষয়টি শ্রমবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি দেশ দু’টি সফর করে এসে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বছরের শুরুতেই শ্রমবাজারে এটা একটা বড় সাফল্য। মরিশাস সরকার এ বছর গার্মেন্টস ও নির্মাণ সেক্টরে বাংলাদেশ থেকে ৪০ হাজার কর্মী নিয়োগ দেবে। সেশেলস দ্বীপপুঞ্জ সরকার নিয়োগ দেবে ৫ হাজার কর্মী। দুই দেশে মোট ৪৫ হাজার কর্মী নিয়োগ দেবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে এই কর্মীদের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হতে হবে। দু’টি দেশের ভাষাই ইংরেজী। কর্মীদের ভাষা জানতে হবে। আবার কাজের দিক থেকেও দক্ষ হতে হবে। আমাদের দক্ষ কর্মী রয়েছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ দেয়া সম্ভব। তবে ভাষার বিষয়টি নিয়ে একটু অসুবিধা রয়েছে। এটাও দূর করা যাবে। দেশ দু’টির প্রতিনিধি দল অল্প দিনের মধ্যে ঢাকায় আসবেন এমওইউ স্বাক্ষর করতে।
সূত্র জানিয়েছে, দু’টি দেশেই বাংলাদেশী বহু কর্মী কাজ করছেন। দেশটিতে কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল মরিশাস ও সেশেলস দ্বীপপুঞ্জে ৪৫ হাজার কর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দু’টি দেশের কর্তৃপক্ষ কর্মী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রী মরিশাসের রাষ্ট্রপতি ড. আমেনা গারিব ফাকিমের সঙ্গে স্টেট হাউসে সৌজন্য সাক্ষাতকালে দেশটির রাষ্ট্রপতি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রতিনিধি দলকে মরিশাসের রাষ্ট্রপতি ড. আমেনা গারিব ফাকিম বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান সরকারের নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নতিসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রশংসাও করেছেন। বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কর্মীদের কাজের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের কর্মীরা কর্মনিষ্ঠ বিনয়ী। তারা কোন অপরাধমূলক কর্মকা-ের লিপ্ত নন। এ কারণেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে তার সরকার আগ্রহী। মন্ত্রীর সফর সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন, উপসচিব মোঃ যাহিদ হোসেন ও মরিশাসে অবস্থিত শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রথম সচিব মোঃ অহিদুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতকালে উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ১০ দিনের সফরে গিয়েছিলেন। প্রতিনিধি দলটি গত ২৩ জানুয়ারি দেশে ফিরেছেন। ১৯৯২ সালে মরিশাস বাংলাদেশ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। দেশটিতে ২০১৭ সালে কর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও কল্যাণার্থে শ্রম কল্যাণ উইং স্থাপন করা হয়েছে। এই উইং মরিশাসসহ সেশেলস দ্বীপপুঞ্জে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পূর্ব আফ্রিকার দেশ মরিশাস বাংলাদেশের মহিলা কর্মীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শ্রমবাজার। বর্তমানে দেশটিতে ২২ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন। এর মধ্যে মহিলা কর্মীর সংখ্যা পুরুষ কর্মীর চেয়ে অনেক বেশি। প্রায় ১৪ হাজার নারী কর্মী কাজ করছেন দেশটিতে। গার্মেন্টস ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজই প্রধান কাজ। তবে বর্তমানে নির্মাণ খাতেও বেশ কিছু কর্মী দেশটিতে যাচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও কর্মী নিয়োগের জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে। সব খাতেই কর্মীরা ভাল টাকা বেতন পাচ্ছেন। বিএমইটি বলেছে, বাংলাদেশের এই বাজারটি সবচেয়ে স্থিতিশীল। এখানে কোন অস্থিরতা নেই। বাজারটি আরও বড় করতে কাজ করা হচ্ছে।
১৯৯২ সালে প্রথম ১২ জন মহিলা কর্মী কাজ নিয়ে মরিশাসে গিয়েছিলেন। এখন দেশটিতে ২০ থেকে ২২ হাজার বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। অন্য যে কোন দেশের তুলনায় মরিশাসে নারী কর্মীরা স্বস্তিতে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ মানবসম্পদ রফতানি খাতে মরিশাসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। কর্মী নিয়োগের সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পরিণত করা হয়। এই চুক্তির আওতায় বর্তমানে দেশটিতে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। তবে নতুন করে যে ৪৫ হাজার কর্মী নিয়োগ হবে তার জন্য আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে। পুরনো চুক্তির আলোকে দেশটিতে প্রতি বছর কয়েক শ’ কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। নতুন চুক্তিতে এক বছরেই ৪৫ হাজার কর্মী নিয়োগ হবে।
উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরের অবস্থিত দ্বীপ রাষ্ট্রটি মাত্র ২ হাজার ৪০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা মাত্র ১৫ লাখ। পর্যটন খাতে সমৃদ্ধ এই দেশটির উন্নয়নের পেছনে রয়েছে প্রবাসী কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম। দেশটিতে নিযুক্ত ২৫ হাজার বিদেশী কর্মীর মধ্যে প্রায় ২২ হাজার কর্মীই বাংলাদেশী। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি। বাংলাদেশী নারী কর্মীরা সেখানে মাছ প্রক্রিয়াকরণ ও বস্ত্র খাতে কাজ করছেন। পুরুষ কর্মীরা নির্মাণ কাজসহ অন্যান্য কাজ করছেন। মরিশাস ও সেশেলস দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিবেশ অনেক উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত। ফলে কাজ করতে তেমন কোন কষ্ট পোহাতে হয় না কর্মীদের।
সৌজন্যে- জনকন্ঠ