প্রতিকূল প্রশাসনিক পরিবেশ ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে স্মার্ট ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং মিয়ানমারে প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিল করেছে। ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী উৎপাদনের লক্ষ্যে মিয়ানমারে ওই প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল স্যামসাং।
বিশ্বের স্মার্টফোন নির্মাতা শীর্ষ এ প্রতিষ্ঠানটির ভিয়েতনামে অন্তত তিনটি প্ল্যান্ট রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মিয়ানমারের সস্তা শ্রম কাজে লাগিয়ে ওই প্ল্যান্ট স্থাপনের কথা বিবেচনা করেছিল স্যামসাং।
দ্য কোরিয়া টাইমস বলছে, মিয়ানমারে একটি উৎপাদন কারখানা স্থাপন না করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্যামসাং। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি সম্প্রতি সফর করেন স্যামসাংয়ের প্রতিনিধিরা। সফর শেষে দেশে ফিরে তারা এ সিদ্ধান্ত নেয়।
উৎপাদন কারখানা স্থাপন করতে গত কয়েক বছর ধরে কোরীয় এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি ধারাবাহিকভাবে অনুরোধ জানিয়ে অাসছে মিয়ানমার। দেশটির ইয়াঙ্গুন শহরে সম্প্রতি একটি মার্কেটিং শাখা চালু করেছে স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্স। থাই স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের অধীনে তারা সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মিয়ানমারের একটি সূত্র দ্য কোরিয়া টাইমসকে বলছে, ‘সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাসহ স্যামসাংয়ের ছোট একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফর করে। এ সময় তারা মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দেশটিতে কারখানা স্থাপনের আগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও রাস্তা তৈরির দাবি জানায় মিয়ানমার।’ ‘ওই বৈঠকের পর মিয়ানমারে কোনো ধরনের বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নেয় স্যামসাং।’ এর আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে কোরীয় জায়ান্ট এ প্রতিষ্ঠানকে ইয়াঙ্গুনের কাছে একটি কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেয় মিয়ানমার।
স্যামসাংয়ের কারখানা স্থাপন পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেছেন, মিয়ানমার স্যামসাংয়ের বিনিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেছে। দেশটির রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অগ্রহণযোগ্য পরিবেশসহ আরো বেশ কয়েকটি কারণ স্যামসাংয়ের বিনিয়োগ না করার পেছনে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, সু চি দেশটির ক্ষমতায় আশার পর অনেকে প্রত্যাশা করেছিলেন, অর্থনীতিতে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি; এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি।
‘এছাড়া দেশটি বিকেন্দ্রীকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন ভাষাভাষী ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সরকারের নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়া অারো জটিল ও অকার্যকর হবে।’
তবে মিয়ানমারে বর্তমানে বিনিয়োগের ব্যাপারে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত বিবেচনাধীন নেই বলে জানিয়েছে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ। দ্য কোরিয়া টাইমসকে দেয়া এক লিখিত জবাবে কোম্পানিটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা ২০১৩ সালে মিয়ানমারে টেলিভিশন কারখানা স্থাপনের চিন্তা-ভাবনা বিবেচনা করেছিলাম। অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও পানি সুবিধা না থাকার কারণে এ সিদ্ধান্ত সেই বছরই বাতিল করা হয়। ‘তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের পর্যালোচনা করিনি।’
সূত্র: দ্য কোরিয়া টাইমস।