বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আগ্রহের জায়গা হয়ে উঠছে মালয়েশিয়া। চলতি শতকের শুরুর দিকে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাজার চালু করতে সরকার নানা উদ্যোগ নেয়। সরকারিভাবে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায় শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে বিপুল টাকা খরচের চিত্রটাই পাল্টে দেয়।
তবে খুব বেশি শ্রমিক সরকারি উদ্যোগে পাঠানো যায়নি। ২০১৩ সালে জিটুজি চুক্তি সেভাবে সফল না হওয়ার পর জিটুজি প্লাস চুক্তি এই চিত্র পাল্টে দিয়েছে।
২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক পাঠাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে জিটুজি প্লাস চুক্তি হওয়ার পর থেকে এক লাখেরও বেশি শ্রমিক গেছেন এশিয়ার আলোচিত এ দেশটিতে।
মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর মার্চে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে জনশক্তি রফতানি শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার শ্রমিকের চাহিদাপত্র মিলেছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন ছাড়পত্র দিয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। কাজে যোগ দিয়েছেন ৮৩ হাজার শ্রমিক।
কুয়ালালামপুর দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম শনিবার বলেন, ‘মাসে কমপক্ষে ২০টি কোম্পানি পরিদর্শন করতে হচ্ছে। তবে ২০ জন শ্রমিকের জন্য চাহিদাপত্রে পরিদর্শন লাগে না। এর বাইরে হলেই আমাদেরকে যেতে হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় মালয়েশিয়ার প্রত্যেকটি প্রদেশের কর্মী নিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে দূতাবাস। গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি পাহাং প্রদেশের ক্যামেরুন হাইল্যান্ড এর ব্যবসায়ী ও নিয়োগ কর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে দূতাবাস। রাষ্ট্রদূত মহ. শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় ৮০ জন নিয়োগকর্তা ও ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় করেন এবং সেখানকার ৬ টি কোম্পানি ও ৩টি সবজি বাগান পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রদূত। এ ছাড়া ৩-৪ মার্চ জহুর বারু ব্যবসায়ী ও নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে চলবে মতবিনিময় । জহুর বারু অবস্থান করছেন রাষ্ট্রদূত মহ. শহীদুল ইসলাম, শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম ও দূতাবাসের প্রথম সচিব শ্রম মো. হেদায়েতুল ইসলাম।
ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিতীয় বৈঠকে পিটিএ নিয়েই আলোচনা করেছে বাংলাদেশ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের নেতৃত্বে মালয়েশিয়াতে ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে দ্বিতীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মালয়েশিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল রামলান ইব্রাহিম। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বাংলাদেশের শ্রমিকের কর্মসংস্থান, রোহিঙ্গা এবং সংস্কৃতিক সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলোতে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে পিটিএ নিয়ে আলোচনা করতে দুই দেশ রাজি হয়েছে।
এ ছাড়া, শ্রমিক রফতানি বিষয়ক জিটুজি প্লাস চুক্তি করায় শ্রমিকদের খরচ এবং দালালদের দৌরাত্ম্য কমে গেছে বলে বৈঠকে দুই দেশই একমত হয়েছে। ওই চুক্তির পর ১ লাখ ২২ হাজার শ্রমিকদের অবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে ৯৮ হাজার ৮০০ শ্রমিক রফতানি হয়েছে বলে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়।
আবার জিটুজি প্লাস চুক্তিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন বলা হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। সেই সঙ্গে মিলছে অন্যান্য নানা সুযোগ সুবিধা যা এর আগে শ্রমিকরা কখনও পায়নি।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ