রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের নতুন ‘অপ্রতিরোধ্য’ পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদের তথ্য প্রকাশ করেছেন। এ সময় যে ভিডিও গ্রাফিক দেখানো হয়, তাতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মানচিত্রের মতো দেখতে একটি জায়গার ওপর বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হচ্ছে।
এগুলো হচ্ছে রাশিয়ার আধুনিকতম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র – যা উড়বে নিচু দিয়ে , একে চিহ্নিত করা হবে খুব মুশকিল, এবং এর পাল্লা হবে অসীম। এটা উড়বে এমন ভাবে – যাতে তা তাকে আটকানোর সব রকম বর্তমান এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যত পন্থাগুলোকে ফাঁকি দিতে পারবে। প্রশ্ন উঠছে, দুই পরাশক্তির মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বাধলে ফ্লোরিডা কেন ক্রেমলিনের লক্ষ্যবস্তু হবে?
বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস লিখছেন, ফ্লোরিডায় পর্যটকদের জন্য বিখ্যাত আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে ডিজনী ওয়ার্ল্ড এবং এভারগ্লেডস জাতীয় উদ্যান।
তাছাড়া এখানে আছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার-আ-লাগো অবকাশকেন্দ্র বা রিসোট। ট্রাম্প সেখানে বেশ কয়েকবার সপ্তাহশেষের ছুটি কাটিয়েছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তিনি পুতিনের এসব কথাবার্তায় পেন্টাগন বিস্মিত হয় নি। আমেরিকান জনগণ নিশ্চিন্ত থাকতে পারে যে আমরা পুরোপুরি তৈরি আছি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রিসোর্টে একাধিক বাংকার আছে, যা পারমাণবিক আক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এছাড়া কয়েক মাইল দূরের পাম বিচে ট্রাম্পের একটি গলফ কোর্স আছে – তার নিচেও একটি বম্ব শেল্টার রয়েছে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা বাংকার যত ভালোভাবেই তৈরি করা হোক না কেন – তা একটা ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি আঘাত ঠেকাতে পারবে না।
ফ্লোরিডার আরেকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তু হতে পারে মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড, এর অবস্থান ট্যাম্পার ম্যাকডিল বিমান ঘাঁটিতে। মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে অপারেশনের একটা কেন্দ্র এটি।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে গেলেও ফ্লোরিডা তাতে প্রধান লক্ষ্যবস্তু হবে এমন সম্ভাবনা কম।
দি লজিক অব আমেরিকান নিউক্লিয়ার স্ট্র্যাটেজি নামে একটি বইয়ের লেখক ক্রোনিগ বলছেন, রাশিয়ার লক্ষ্য হচ্ছে তার আক্রমণের পর আমেরিকার পাল্টা জবাব দেবার ক্ষমতাকে ভোঁতা করে দেয়া।
তিনি বলছেন, মস্কো হয়তো যেসব জায়গাকে তার লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে তার তার মধ্যে আছে মন্টানায় ম্যালস্ট্রম বিমান ঘাঁটিতে মাকিন পারমাণবিক অস্ত্রের গুদাম, নর্থ ডাকোটার মিনোটে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি, নেব্রাস্কার ওমাহায় ওফাট ঘাঁটি যেখানে মার্কিন কৌশলগত কমান্ডের দফতর, আর ওয়াইওমিং সীমান্তের ওয়ারেন বিমান ঘাঁটি।
রাশিয়ার আরো লক্ষ্য হবে ওয়াশিংটনের ব্যানগর এবং জর্জিয়ার কিংস বেতে মার্কিন সাবমেরিন ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা। তা ছাড়া আরো ৭০টি ঘাঁটিও থাকবে আঘাতের তালিকায়। এর ওপর আমেরিকার ১৩১টি সবচেয়ে জনবহুল শহরের প্রতিটিতে ২টি করে ক্ষেপণাস্ত্র ফেলা হবে – এর লক্ষ্য হবে আমেরিকার শিল্প ক্ষমতা নষ্ট করা এবং সার্বিক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো।
এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ওয়াশিংটন ডিসির কমান্ড এ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে আঘাত হানা – বলেন ক্রোনিগ। আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিশেষজ্ঞ মার্ক ফিৎজপ্যাট্রিক বলছেন, ফ্লোরিডার ওপর আক্রমণের ভিডিও তৈরি করাটা কোন যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি নয়।
এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটা বার্তা দেয়া, এবং ভিডিওটার মধ্যেই সেই প্রতীকী ব্যাপারটা রয়েছে, বলেন তিনি।