মালয়েশিয়ায় দালালের ফেলে যাওয়া মইনুল অবশেষে মারা গেলেন। শনিবার রাত ৯টায় সারডাং হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মইনুল নাটোর থেকে জায়গা জমি বিক্রি করে অর্থ তুলে দিয়েছিলেন দালালের হাতে। দালাল তাকে নাটোর থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের জঙ্গল পেরিয়ে সাগরে মাছধরা ট্রলারে তুলে দেয়, এরপর জাহাজে। খেয়ে না খেয়ে রোদ বৃষ্টি, ঝড়, উত্তাল সাগর দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে।
সেখানে মানবেতর জীবনযাপনের একপর্যায়ে মালয়েশিয়ার জহুর প্রদেশে প্রবেশ করানো হয়। জহুর প্রদেশে অবস্থানের একপর্যায়ে এক কারখানায় কাজ মেলে। কিন্তু তার বাইরে যাওয়া বারণ। কারণ পাসপোর্ট নেই, ভিসা নেই! শুরু হল বন্দিজীবন। দালাল টাকা নেয় কাজ দেয়ার জন্য মাসে মাসে। মাস শেষ হলেই বেতনের এক-তৃতীয়াংশ নেয় দালাল। এরপর পাসপোর্ট ও পারমিট করে দেয়ার জন্য নেয় হাজার হাজার রিঙ্গিত। সব মিলে এত দেনা শোধ হয় বেতন থেকে মাসে মাসে। এরপর যা থাকে তাই দিয়ে চলে খাওয়া, থাকা। যৎ সামান্য কিছু অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠাতে পারেন।
এর মধ্যে একদিন বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে পড়ে যান। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার বলে এক সাইট প্যারালাইজড। হাঁটতে পারবে না! জহুর থেকে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে একজন সহযোগীসহ রেখে যায় দালাল। বলে ইমিগ্রেশনে জরুরি কাজ আছে। এখানে চেকইন করে তোরা চলে যাবি। আর কোনো সমস্যা নেই। ১১ ফেব্রুয়ারি মালিন্দ এয়ারের চেক ইন কাউন্টারে স্ট্রোক করে রক্তক্ষরণ হয়। সঙ্গের ব্যক্তিটিও চলে গেছেন। তিনি হয়ে পড়লেন একা। সারডাং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্য এগিয়ে আসেন শাহ আলম, যিনি কমিউনিটির জন্য কাজ করেন।
ক্রমেই দেখা দিল ফুসফুসে ইনফেকশন, জ্বর, শরীর অত্যধিক দুর্বল, মুখে খেতে পারে না, শরীরের ডান পাশ অবশ, ডাকলে সাড়া নেই, নিজে শ্বাস নেয়ার যো নেই, মেশিন দিয়ে শ্বাস চালু রাখা হয়েছে- বুকটা অনেক ওঠানামা করে আর শব্দ হয়। অবশেষে শনিবার রাতে তিনি মারা যান।
সূত্র- যুগান্তর