আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ইতালিতে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে এবার জোরালো স্লোগান ‘ইতালিয়ান ফার্স্ট’। অর্থাৎ সবার আগে ইতালিয়ানদের কথা ভাবতে হবে। ফলে পুরো ইতালিতে অভিবাসন বিরোধী একটি আবহ তৈরি হয়েছে। এ নির্বাচনে মুখোমুখি মধ্য-বামপন্থি জোট, সরকার বিরোধী ফাইভ স্টার মুভমেন্ট এবং ডানপন্থি জোট। সবার মাঝেই একই সুর শোনা যাচ্ছে।
আগামী ৪ মার্চ এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এর আগে চূড়ান্ত এক জরিপে দেখা যাচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির নেতৃত্বাধীন ডানপস্থি হোট অনেকটা এগিয়ে আছে। তবে তারা এতটা বেশি সমর্থন পাচ্ছে না যা দিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা যায়। সিলভিও বেরলুসকোনির এই জোটে আছে তার ফোরজা ইতালি পার্টি ও অভিবাসন বিরোধী দুটি দল। এ দল দুটি হলো নর্দার্ন লিগ ও ব্রাদার্স অব ইতালি। জরিপে ফাইভ স্টার মুভমেন্টকে সমর্থন করছে শতকরা ২৮ ভাগ মানুষ। নির্বাচনে তারাই এককভাবে অংশ নিচ্ছে। অর্থাৎ তাদের সঙ্গে অন্য কোনো দলের অংশীদারিত্ব নেই।
অন্যদিকে মধ্য-বামপন্থি গ্রুপগুলোর নেতৃত্বে গঠিত জোটের সমর্থনও ২৮ ভাগ। এ গ্রুপটির নেতৃত্বে আছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। তবে এখনও কয়েক লাখ ভোটার আছেন, যারা কাকে ভোট দেবেন সে সিদ্ধান্ত নেন নি। তাই ডানপন্থিরা ও ফাইভ স্টার মুভমেন্টের কণ্ঠে একই সুর। তারা যে করেই হোক এই কয়েক লাখ ভোটারকে তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে ইস্যুটি হলো অভিবাসন।
গত চার বছরে উপকূল দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন প্রায় ৬ লাখ অভিবাসী ও শরণার্থী। তাদেরকে ইস্যু বানিয়ে নির্বাচনে জিততে চাইছেন সিলভিও বেরলুসকোনি। তিনি বলেছেন, অভিবাসীরা হলেন সামাজিক বোমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হলেন সিলভিও বেরলুসকোনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার রয়েছে এক রকম বৈরিতা। নিজে ধনকুবের তিনি। রয়েছে অনেক মিডিয়া হাউজ। আছে ব্যবসা। তিনি ইতালির রাজনীতিতে এত প্রভাব বিস্তার করলেও নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না।
কারণ, ২০১৩ সালে আয়কর ফাঁসি দেয়ার জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারলেও কিং মেকার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তিনি। তার জোট যদি বিজয়ী হয় তাহলে কেমন সরকার হবে, তাতে কারা কারা থাকবেন তাও হয়তো তিনিই নির্ধারণ করবেন। সিলভিও বেরলুসকোনি তীব্র অভিবাসন বিরোধী। এরই মধ্যে দাবি তুলেছেন, কাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার। একই রকম সুর তুলেছেন ফাইভ স্টার মুভমেন্টের নেতা লুইগি ডি মাইও। তিনিও বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেয়া উচিত। অগ্রাধিকার দিতে হবে ইতালিয়ানদের। অভিন্ন অবস্থানে আছেন ডানপন্থি নেতা, নর্দার্ন লিগের মাত্তিও সালভিনি। তিনিও একই কথা বলছেন। ফলে ইতালির নির্বাচনে অভিবাসী বিরোধী এক ঢেউ খেলে যাচ্ছে।
অন্যদিকে নর্দার্ন লিগের প্রতিষ্ঠাতা আমবার্গো বোসি দলের নামের প্রথম অংশ নর্দার্ন নির্বাচনের সময় ব্যবহার না করার পক্ষে। এর উদ্দেশ্য যাতে ইতালির দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষও তাদেরকে ভোট দেয়। ইউরোপে এ দলটির ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেন ম্যারি লা পেন। তিনি যেমন জাতীয়তাবাদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন সে অবস্থান নিচ্ছে না এই লীগ। মধ্য-বামপন্থি জোটের নেতৃত্বে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি। তিনিই শুধু অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যে সুর তোলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তবে তার জোট সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। ইতালির সিসিতে অবস্থিত ল্যামপেডুসা দ্বীপ। এটাই হলো অভিবাসীদের প্রথম টার্গেট। প্রথমে তারা সমুদ্র পথে এখানে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
তারপর ছড়িয়ে পড়ে ইতালির বিভিন্ন স্থানে। সেখানকার মেয়র সালভাতোরে মারটেলোকে এখনও কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলতে শোনা যায় নি। তিনি বলেছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। ল্যামপেডুসায় অভিবাসী আসার হার অনেক কমে গেছে।