টিভি পর্দায় হিজাবী সাংবাদিক! এ দৃশ্য অকল্পনীয় মার্কিন কোনো টেলিভিশন চ্যানেলে। তবে সেই অকল্পনীয় দৃশ্যটিই এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে অন্তত একটি টিভি স্টেশনে। কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মাধ্যমে শত বাধা পেরিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা নারীটির নাম তাহেরা রহমান। ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো টিভি স্টেশনে তিনি প্রথম সাংবাদিক হিসেবে হিজাব পরে সংবাদ পাঠ করেছেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি ইলিনয়েস-আইওয়া সীমান্তবর্তী এলাকা কুয়াড সিটিজে স্থানীয় টিভি স্টেশন ‘লোকাল ফোর নিউজ’-এ হিজাব পরিহিত অবস্থায় সংবাদ পাঠ করেন তাহেরা। তাকে নিয়ে হলিউড রিপোর্টার ও সিবিএস টেলিভিশন সংবাদ প্রকাশ করেছে। ‘লোকাল ফোর নিউজ’ চ্যানেলটি মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিবিএসের আঞ্চলিক শাখা। ইলিনয়েস ও আইওয়া দুই প্রদেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি শহরকে একসঙ্গে কুয়াড সিটিজ বলা হয়।
ওই অঞ্চলে সম্প্রচার হয় ‘লোকাল ফোর নিউজ’। স্টেশনটিতে গত দুই বছর ধরে নিউজ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করছিলেন তাহেরা। তবে সব সময়ই তার স্বপ্ন ছিলো টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট তুলে ধরার।
কিন্তু মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলোর অঘোষিত নীতি হল, হিজাব পরা কাউকে পর্দায় হাজির করা হবে না। মেধাবী তাহেরা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্মাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। আগে কাজ করেছে সিবিএসের শিকাগো ব্যুরোতেও। সহকর্মী ও সিনিয়রা সব সময় বলে এসেছেন, পর্দার সামনে আসতে হলে তাকে হিজাব খুলতে হবে!
তাহেরা জানান, শিকাগো এলাকায় একাধিক টিভি স্টেশনে তিনি চেষ্টা করেছেন রিপোর্টার বা প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করার জন্য। কিন্তু সবাই তাকে তার হিজাবের কথা বলে না করে দিয়েছে। ‘টিভিতে কখনো আমার মতো দেখতে কাউকে দেখিনি। তাই মনে হয়েছিল আমি আসলে এই সুযোগ পাবো না।’ এক পর্যায়ে যখন নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দেয়ারই সিদ্ধান্ত নেন, তখন একদিন মায়ের কাছ থেকে ফোন পান। আবেগাপ্লুত মা মেয়েকে হাল না ছাড়তে পরামর্শ দেন। এরপরই নতুনভাবে কাজ শুরু করেন তাহেরা।
ওই তরুণী বলেন, মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর মনে হল, হয়তো কোনো একদি কেউ একজন আমার কাজ দেখে ভাল লাগতে পারে, আর তখন আমাকে একটা সুযোগ দিয়েও দিতে পারে। এরপরই যোগ দেন লোকাল ফোর নিউজে। এবং শেষ পর্যন্ত কাজে মুগ্ধ হয়েই কর্তৃপক্ষ তাকে টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ দেয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি।
গত শুক্রবার ‘লোকাল ফোর নিউজ’ জানায়, তাহেরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কোনো হিজাবী মুসলিম নারী যিনি অন-এয়ার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করবেন। মার্কিন সংস্থা রেডিও টেলিভিশন ডিজিটাল নিউজ এসোসিয়েশন এর ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দেশটির স্থানীয় টিভি স্টেশনগুলোতে কাজের সুযোগ পাওয়াদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য মাত্র ২২ শতাংশ ।
কলাম্বিয়া জার্নালিজম রিভিউ ২০১৩ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখিয়েছে, সাংবাদিকতায় পড়াশোনার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্ররা টিভি চ্যানেলগুলোতে কাজের ক্ষেত্রে সাদা চামড়ার ছাত্রদের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম সুযোগ পান।
মেয়ের সাফল্যে খুবই খুশি তাহেরার বাবা-মা। প্রথম টিভি পর্দায় সংবাদ পাঠের দিন পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে তাহেরার অফিসে এসে হাজির হয়েছিলেন তারা। অনুষ্ঠান দেখতে বসে কান্না থামাতে পারেননি মা।