সহিংসতায় বিধ্বস্ত রাখাইনের উন্নয়ন ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে প্রতিবেশি ভারত। সাম্প্রতিক সহিংসতায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রাখাইন থেকে। এর মাঝেই বুধবার ভারত-মিয়ানমারের ওই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
বুধবার দেশটির রাজধানী নেইপিদোতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর ও মিয়ানমারের সামাজিক কল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন উপ-মন্ত্রী ইউ সোয়ে অং ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
গত আগস্টে রাখাইনে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার মানুষের আর্থ-সামাজিক ও জীবন-জীবিকার উন্নয়নে এই প্রথম কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের পারস্পরিক অংশীদারিত্ব চুক্ত স্বাক্ষর হলো।
রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে মিয়ানমারে রয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রাখাইন রাজ্যের স্বাভাবিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার ও বাস্ত্যুচুত মানুষদের ফেরানোর লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকারকে সহায়তা করাই এ চুক্তির উদ্দেশ্য।
মন্ত্রণালয় আরো বলছে, বাস্ত্যুচুত মানুষের জরুরি চাহিদা মোকাবেলায় রাখাইন রাজ্যে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে সহায়তা করবে ভারত।
ভারতীয় এই মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিয়ানমার সফরের সময় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাসহ রাখাইন রাজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে রাখাইন রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও বেশ কিছু বন্ধুত্বমূলক প্রকল্পের ব্যাপারে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ও পালেতওয়া-জোরিনপুই সড়ক নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া রি-টিদ্দিম সড়কের উন্নয়ন, কালেওয়া থেকে ইয়ার্গি পর্যন্ত ত্রিদেশীয় মহাসড়ক প্রকল্প, তামু-কিগোন-কালেওয়া প্রকল্পের আওতায় ৬৯টি সেতু, ইয়ামেথিন পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। এসময় দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা, সহযোগিতা ও উত্তর রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে হ্লেইংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন জয়শঙ্কর।
মিয়ানমার সামরিক বাহিনী গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই সময় দেশটির সীমান্তে ৩০টির বেশি পুলিশ ও সেনা তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের হামলা ১২ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়।
এ হামলার জবাবে দেশটির সেনাবাহিনীর কঠোর সামরিক অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য বলছে, আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ারস (এমএসএফ) বলছে, মিয়ানমারে ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৯ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তবে সহিংসতার কারণেই ৫ বছরের কম বয়সী ৭৩০ শিশুসহ ৬ হাজার ৭০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।