আজ আমার প্রবাস জীবন নিয়ে কিছু কথা লিখতে চাই। নিজের দেশ ছেড়ে আট হাজার মাইল দূরের একটা দেশে পড়ে আছি। একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়, নিজেকে গড়ে তোলার আশায়। ছোটবেলায় শুনতাম সাগরের ওপারে আছে অন্য এক না জানা শহর, তখন ঐ শহরকে অনেক ভয় পেতাম। স্বপ্নেও ভাবিনি একদিন সেই ভয় পাওয়া শহরে চলে আসতে হবে।
এখন আর ভয় পাই না। এ শহর ভয় পাওয়া মানুষের জন্যে তৈরি হয়নি, তৈরি হয়েছে কঠিন বাস্তবতার জন্যে। বন্ধুদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকা ছেলেটা এখন সময়ের অভাবে হাঁপিয়ে ওঠে। কষ্ট পেলে মায়ের আঁচলে মুখ লুকানো আমি এখন আর কষ্ট পাই না। মায়ের আঁচল নেই এখানে জানি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই গরম চা এখন আর ডাইনিং টেবিলে পাওয়া যায় না।
কখনো রান্না করতে ইচ্ছে না করলে খাবার জোটে না। জিজ্ঞেস করার কেউ নেই খেয়েছি কি না। রান্না করার সময় একদিন মা ফোন করে বলে, বাবা কি খেয়েছিস? আমি বললাম, মুরগী পোলাও খেয়েছি। মা বেশ খুশি হয়ে ফোনটা রেখে দিলেন। আমার হাতে তখনো নুডলসের খালি প্যাকেটটা।
বাবা টাকা দিয়েছিলেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ হয়ে গেছে। হাতে টাকা নেই, বলার সাহসও নেই। টানা অনেকদিন নুডলস খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। অসুবিধা নেই, কেউ তো আর দেখছেনা। এখন সব সয়ে গেছে। এখন আর কষ্ট পাই না, জীবনটা উপভোগ করি এখন..
তবুও মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়। মায়ের চেহারা মনে করে কিংবা বোনের সাথে খুঁনসুটি করার মূহুর্ত মনে করে, বন্ধুটার সানগ্লাস নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া, এসব স্মৃতিই আমার এ শহরে বেঁচে থাকার সম্বল। এসব নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে, বেঁচে থাকাই জরুরি।
লিখেছেন: সুব্রত বড়ুয়া।